পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলাভাষা-পরিচয় 8२4 প্রত্যয় দিয়ে হল ‘লোকস্থাসানি, হাসির গুণটা গেল বিগড়িয়ে । ছাকুনি নিড়নি বিন্থনি চাটনি শব্দ বস্তুবাচক, সেইজন্তে তাদের মধ্যে নিন্দার কাজ প্রবেশ করতে পারে নি। ইআ [ বিকারে ‘এ’ ] প্রত্যয়টা যখন বস্তসূচক না হয়ে ভাবস্থচক হয়, তখন তার ইঙ্গিতে কোথাও স্বখের বা শ্রদ্ধার জাভাস পাব না। যেমন : নড়বড়ে নিড় বিড়ে খিটখিটে কটমটে টনটনে কনকনে মিনমিনে প্যানপেনে ঘ্যানঘেনে ভ্যাঙ্গভেজে ভ্যাদভেদে ম্যাজমেজে ম্যাড় মেড়ে জবজবে খসখসে জ্যালজেলে। সামান্ত কয়েকটা ব্যতিক্রম আছে, 'জলজলে’ টুকটুকে ; সংখ্যা বেশি নয় । এবার দেখা যাক উজ্জা’র বিকারে ‘ও’ প্রত্যয় : ধেয়ো বেতো জোরো হলো টেকেল ষ্ট্ৰেকো গুফো কুনো বুনো পেকো, ফোতো ( বাৰু), রোথো খেলো ভেতো, খেগে (পোকায় )। এগুলোও স্ববিধের নয় ; হয় তুচ্ছ নয় পীড়াকর। ভাত ষে খায় সে নিন্দনীয় নয়, কিন্তু কাউকে যদি বলি ‘ভেতো তবে তাকে সম্মান করা হয় না । জীবমাত্রই খাদ্যপদার্থ ব্যবহার করে, সেটা দোষের নয় ; কিন্তু কোনো-একটা খাদ্যের সম্পর্কে কাউকে যদি বলা হয় ‘খেগে তা হলে বুঝতে হবে সেই খাস্ত সম্বন্ধে অবজ্ঞার কারণ আছে। যথাস্থানে ৰখাপরিমাণে জল উপাদেয়, কিন্তু যাকে বলি ‘জোলো তার মূল্য বা স্বাদের সম্বন্ধে অপবাদ দেওয়া হয়। মন্দত্ব বোঝাতে সংস্কৃতে ছ: ব’লে একটা উপসর্গ আছে, কুও যোগ করা যায়। কিন্তু বাংলায় এই প্রত্যয়গুলোতে যে কুৎসাবিশিষ্ট অবমাননা আছে অন্ত কোনো ভাষায় বোধ হয় তা পাওয়া যায় না । এবার স্ত্রীলিঙ্গ প্রত্যয়ের আলোচনা ক’রে প্রত্যয়ের পালা শেষ করা যাক । খাপছাড়াভাবে সংস্কৃতের অনুসরণে নী ও ঈ প্রত্যয়ের যোগে স্ত্রীলিঙ্গ বোঝাবার রীতি বাংলায় আছে, কিন্তু তাকে নিয়ম বলা চলে না। সংস্কৃত ব্যাকরণকেও মেনে চলবার অভ্যেস তার নেই। সংস্কৃতে ব্যান্ত্রের স্ত্রী "ব্যাস্ত্রী’, বাংলায় সে বাঘিনী’ । সংস্কৃতে "সিংহা'ই স্ত্রীজাতীয় সিংহ, বাংলায় সে "সিংহিনী’। আকারযুক্ত স্ত্রীবাচক শৰ সংস্কৃত থেকে বাংলা ধার নিয়েছে, যেমন ‘লতা’ ; কিন্তু স্ত্রীলিঙ্গে আ প্রত্যয় বাংলায় নেই। সংস্কৃতে আছে জানি, এত বেশি জানি যে, আকারান্ত শৰ দেখবামাত্র তাকে নারীশ্ৰেণীয় বলে সন্সেছ করি। বাংলাদেশের মেয়েদের সবিতা' নাম দেখে প্রায়ই আশঙ্কা হয় ‘পিতা'কে পাছে কেউ এই নিয়মে মাতা ৰ’লে গণ্য করে। মেয়েদের নামে 'চন্দ্রমা’ শস্বেরও ব্যবহার দেখেছি, জায় মনে পড়ছে কোনো ছর্বোগে ভগবান চন্দ্রমা স্ত্রীছদ্মবেশে বাঙালির ঘরেও দেখা দিয়েছেন, বাঙালির কাব্যেও অবতীর্ণ হয়েছেন ।