পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলাভাষা-পরিচয় 88s বাবে । ‘লে যাবেই ঠিক করেছে’, অর্থাৎ তার যাওয়াটাই একান্ত। ‘ও’ দেয় জুড়ে, ‘ই’ ছিড়ে আনে । বক্রোক্তির কাজেও ‘ই’কে লাগানো হয়েছে : কী কণগুই করলে, কী বাদরামিই শিখেছ । "কী শোভাই হয়েছে' ভালোভাবে বলা চলে, কিন্তু মন্দভাবে বলা আরও চলে। এর সঙ্গে ‘টা জুড়ে দিলে তীক্ষতা আরও বাড়ে, যেমন : কী ঠকানটাই ঠকিয়েছে । আমরা সোজা ভাষায় প্রশংসা করে থাকি : কী চমৎকার, কী স্বন্দর । ওর সঙ্গে একটু-আধটু ভঙ্গিমা জুড়ে দিলেই হয়ে দাড়ায় বিদ্রুপ । ‘তা’ শব্দটা কোথাও সর্বনাম কোথাও অব্যয় । তুমি যে না বলে বাবে তা হবে না : এখানে না বলে যাওয়ার প্রতিনিধি হচ্ছে তা, অতএব ‘সর্বনাম । ত, তুমি বরং গাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে : এই তা’ অব্যয় এবং অর্থহীন, না থাকলেও চলে । তবু মনে হয় একটুখানি ঠেলা দেবার জন্তে যেন প্রয়োজন আছে। তা, এক কাজ করলে হয় : একটা বিশেষ কাজের দিকটা ধরিয়ে দিল ঐ ‘তা’ । ‘বুঝি’, সহজ অর্থ ‘বোধ করি’। অথচ বাংলা ভাষায় বুঝি’ বোধ করি বোধ হচ্ছে বললে সংশয়যুক্ত অহমান বোঝায় : লোকটা বুঝি কালা, তুমি বুঝি কলকাতায় যাবে। ‘তুমি কি যাবে’ এই বাক্যে কি অব্যয়ে স্বম্পষ্ট প্রশ্ন। কিন্তু তুমি বুঝি যাবে' এই প্রশ্নে যাবে কি না সন্দেহ করা হচ্ছে । বাংলা ভাষায় বুঝি’ শৰে বুঝি ভাবটাকে অনিশ্চিত করে রাখে। বুঝির সঙ্গে ‘বা’ জুড়ে দিলে তাতে অহমানের স্বরটা আরও প্রবল হয় । যদি, যদি বা, যদিই বা, যদিও বা । যদি অন্যায় কর শাস্তি পাবে : এটা একটা সাধারণ বাক্য । যদি বা অন্যায় ক’রে থাকি : এর মধ্যে একটু ফাক আছে, অর্থাৎ না করার সম্ভাবনা নেই-যে তা নয়। যদিই বা অস্তায় করে থাকি ; অন্তায় করাটা নিশ্চিত বলে ধরে নিলেও আরও কিছু বলবার আছে। যদিও বা অন্যায় করে থাকি ; অন্যায় সত্বেও স্পর্ধা আছে মনে । ‘তো অব্যয়শন্ধে অনেক স্থলে ‘তবু বোঝায়, যেমন : বেলায় এলে তো খেলে না কেন । কিন্তু, তুমি তো বলেই খালাস, সে তো হেসেই অজ্ঞান, আমি তো ভালো মনে করেই তাকে ডেকেছিলুম, তুমি তো বেশ লোক, সে তো মন্ত পণ্ডিত— এ সব স্থলে 'তো' শব্দে একটু ভংগনার বা বিস্ময়ের আভাস লাগে, যথা : তুমি তো গেলে না, সে তো বসেই রইল, তবে তো দেখছি মাটি হল । । ‘গে’ শস্যের প্রয়োগ সৰোধনে 'ভূমি বর্গের মাছৰ সম্বন্ধে, ‘তুই’ বা আপনি বর্গের নয় ; কেন গো, মশায় গো, কী গো, ওগো শুনে যাও, ই গো তোমার হল কী।