পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8やS রবীজ-রচনাবলী আর-একদিন আমি বোটে করিয়া একটা বড়ো বিল দিয়া আসিতেছিলাম। বিলের জল যেখানে নদীতে আসিয়া পড়ে সেখানে মাছ ধরিবার স্ববিধা করিবার জন্য জেলেরা বড়ে বড়ো খোটা পুতিয়া জলের নির্গমনপথকে সংকীর্ণ করিয়া দেয়, তাহাতে জলধারার বেগ অত্যন্ত প্রবল হইয়া উঠে ; এইরূপ স্থানে অনেক বোঝাই নৌকাকে বিপন্ন হইতে দেখিয়াছি। এই সংকীর্ণ পথ পার হইবার কালে আমার বোট কোনোমতে খোটার আঘাত বঁাচাইতে গিয়া ভারি একটি সংকটের জায়গায় আটকাইয়া পড়িল । আট-দশ হাত দূরেই জেলেরা মাছ ধরিতেছিল। আমাদের সাহায্য করিবার জন্ত তাহাদিগকে ডাকাডাকি করা গেল, তাহারা তাকাইয়াও দেখিল না। বোটের মাঝি পুরস্কার কবুল করিল। তাহারা ডাক বাড়াইবার প্রত্যাশায় বধিরতার ভাণ করিল। ডাক বাড়িয়া যখন বেশ একটা মোটা অঙ্কে উঠিয়াছে তখন জেলেদের শ্রবণশক্তির বাধা হঠাৎ সম্পূর্ণ দূর হইয়া গেল। অথচ তাহাদেরই কৃতকর্মের ফল আমরা ভোগ করিতে বসিয়াছিলাম ; আমাদের দেশের কোনো পাঠককে এ কথা বলা বাহুল্য, যদি হাকিমের বোট হইত তাহা হইলে ইহাদের শ্রতিশক্তির পরীক্ষায় অন্তরূপ ফল দেখা যাইত । বোলপুরের বাজারে একটা দোকানে যখন আগুন লাগিয়াছিল তখন তোমাদের মনে আছে, আগুন নিবাইবার কাজে চারজন বিদেশী কাবুলি তোমাদের সাহায্য করিয়াছে ; পাড়ার লোককে ডাকিয়া সাড়া পাও নাই । মনে আছে, যাহাদের নিকট কলসী চাহিতে গিয়াছিলে তাহারা, পাছে তাহাদের কলস অপবিত্র হইয়া নষ্ট হয়, এজন্য দিতে চাহিল না। আমরা আমাদের চারি দিকে এই-ষে আত্মত্যাগের কার্পণ্য দেখিতে পাই, দৃষ্টান্তবাহুল্যের দ্বারা তাহা প্রমাণ করিবার চেষ্টা করিতে হইবে না। কেননা, আমরা মুখে যে যাহাই বলি-না কেন, অস্তত মনে মনে আমাদের চরিত্রের এই দৈন্ত সকলেই স্বীকার করিয়া থাকি । আত্মত্যাগের সঙ্গে আধ্যাত্মিকতার কি কোনো যোগ নাই। এটা কি ধর্মবলেরই একটা লক্ষণ নহে । আধ্যাত্মিকতা কি কেবল জনসঙ্গ বর্জন করিয়া শুচি হুইয়া থাকে এবং নাম জপ করে । আধ্যাত্মিক শক্তিই কি মাস্থ্যকে বীর্ধ দান করে না । টাইটানিক জাহাজ ডোবার ঘটনায়’ আমরা এক মুহূর্তে অনেকগুলি মাহবকে মৃত্যুর সম্মুখে উজ্জল আলোকে দেখিতে পাইয়াছি । ইহাতে কোনো-একজন মাত্র মানুষের অসামান্তত প্রকাশ হইয়াছে এমন নহে। সকলের চেয়ে আশ্চর্ব এই যে, যাহারা ১ টাইটানিক'-ডুবি : ১৪ এপ্রিল ১৯১২