পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পথের সঞ্চয় 8S& আনন্দরূপ আজ সকালে জাহাজের ছাদের উপর রেলিঙ ধরিয়া দাড়াইয়াছিলাম। 'আকাশের পাণ্ডুর নীল ও সমুত্রের নিবিড় নীলিমার মাঝখান দিয়া পশ্চিম দিগন্ত হইতে স্বত্বশীতল বাতাস আসিতেছিল। আমার ললাট মাধুর্বে অভিষিক্ত হইল। আমার মন বলিতে লাগিল, “এই তো তাহার প্রসাদম্বধার প্রবাহ ।” * # সকল সময় মন এমন করিয়া বলে না। অনেক সময় বাহিরের সৌন্দর্ধকে আমরা বাহিরে দেখি– তাহাতে চোখ জুড়ায়, কিন্তু তাহাকে অস্তরে গ্রহণ করি না। ঠিক যেন অমৃতফলকে আঘ্ৰাণ করি, তাহার স্বাদ লই না । কিন্তু সৌন্দর্য যেদিন অন্তরাত্মাকে প্রত্যক্ষ স্পর্শ করে সেইদিন তাহার মধ্য হইতে অসীম একেবারে উদ্ভাসিত হইয়া উঠে । তখনি সমস্ত মন এক মুহূর্তে গান গাছিয়া উঠে, নহে, নহে, এ শুধু বর্ণ নহে, গন্ধ নহে– এই তো অমৃত, এই তাহার বিশ্বব্যাপী প্রসাদের ধারা ।” আকাশ ও সমুদ্রের মাঝখানে প্রভাতের আলোকে এই-ষে অনির্বচনীয় মাধুর্ব স্তরে স্তরে দিকে দিকে বিকশিত হইয়া উঠিয়াছে, ইহা আছে কোনখানে । ইহা কি জলে। ইহা কি বাতাসে । এই ধারণার অতীতকে কে ধারণ করিতে পারে। ইহাই আনন্দ, ইহাই প্রসাদ । ইহাই দেশে দেশে, কালে কালে, অগণ্য প্রাণীর প্রাণ জুড়াইয়া দিতেছে, মন হরণ করিতেছে— ইহা আর কিছুতেই ফুরাইল না। ইহারই অমৃতম্পর্শে কত কবি কবিতা লিখিল, কত শিল্পী শিল্প রচনা করিল, কত জননীর হৃদয় স্নেহে গলিল, কত প্রেমিকের চিত্ত প্রেমে ব্যাকুল হইয়া উঠিল— সীমার বক্ষ রন্থে রক্তে ভেদ করিয়া এই অসীমের অমৃত-ফেয়ারা কত লীলাতেই যে লোকে লোকে উৎসারিত প্রবাহিত হইয়া চলিল তাহার আর অস্ত দেখি না— অস্ত দেখি না। তাহা আশ্চর্য, পরমাশ্চর্ষ। ইহাই আনন্দরূপমমৃতম্। রূপ এখানে শেষ কথা নহে, মৃত্যু এখানে শেষ অর্থ নহে । এই-ষে রূপের মধ্য দিয়া আনন্দ, মৃত্যুর মধ্য দিয়া জমৃত । শুধুই রূপের মধ্যে আসিয়া মন ঠেকিল, মৃত্যুর মধ্যে আসিয়া চিন্তা ফুরাইল, তবে জগতে জন্মগ্রহণ করিয়া কী পাইলাম! বস্তুকে দেখিলাম, সত্যকে দেখিলাম না ! আমার কি কেবলই চোখ আছে, কান আছে। আমার মধ্যে কি সত্য নাই, আনন্দ নাই। সেই আমার সত্য দিয়া আনন্দ দিয়া যখন পরিপূর্ণ কৃষ্টতে জগতের দিকে চাহিয়া 《S L.