পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Q○8 রবীন্দ্র-রচনাবলী থাকিতে হইলে মন উতলা হইয়া উঠে। দেশের এই মানসভাণ্ডারে যে লোক একবার একটা কিছু জোগাইয়াছে তাহার আর নিষ্কৃতি নাই ; লে লোকের উপর আরো'র তাগিদ পড়িল ; খেজুরগাছের মতো বৎসরের পর বৎসরে কাটের পর কাট চলিতে থাকে ; কোনো বারে রসের একটু কমতি বা বিরাম পড়িলে সে পাড়ামৃদ্ধ লোকের প্রশ্নের বিষয় হইয়া উঠে । কাজেই এখানকার মনোরাজ্যটা যদি চোখে দেখিবার হইত তবে দেখিতাম, সদর রাস্তায় এবং গলিতে, আপিস-পাড়ায় এবং বারোয়ারি-তলায় হুড়াহুড়ি পড়িয়া গেছে ; ভিড় ঠেলিয়া চলা দায় । সেখানেও কেহ বা পায়ে হাটিয়া চলে, কেহ বা মোটরগাড়ি হাকায় ; কেহ বা মজুরি করে, কেহ বা মহাজনি করিয়া থাকে ; কিন্তু সকলেই বিষম ব্যস্ত। ভোরবেলা হইতে রাত দুপুর পর্যস্ত চলাচলের অস্ত নাই । কথাটা নূতন নহে। আমাদের দেশের তন্দ্রালস নিস্তন্ধ মধ্যাহ্নেও আমরা অর্ধেক চোখ বুজিয়া আন্দাজ করিতে পারি, এ দেশের চিন্তার হাটে কী ভয়ংকর কোলাহল এবং ঠেলাঠেলি । কিন্তু, সেই ভিড়ের চাপটা নিজের মনের উপর যখন ঠেলা দেয় তখন স্পষ্ট করিয়া বুঝিতে পারি তাহার বেগ কতখানি । এ দেশে যাহারা মনের কারবার করেন তাহদের কাছে আসিলে সেই বেগটা বুঝিতে বিলম্ব হয় না। ইহাদের সঙ্গে আমার পরিচয় খুব বেশি দিনেরও নয়, খুব অন্তরঙ্গও নয়, ক্ষণকালের দেখাসাক্ষাং মাত্র। কিন্তু, সেই সময়টুকুর মধ্যে একটা জিনিস লক্ষ্য করিয়া আমি বারা বিস্মিত হইয়াছি, সেটা ইহাদের মনের ক্ষিপ্ৰহস্ততা । মন ইলেক্‌টিক আলোর তারের মতো সর্বদা যেন প্রস্তুত হইয়াই আছে, বোতামটি টিপিবা মাত্র তখনি জলিয়া উঠে । আমাদের প্রদীপের আলোর ব্যবহার ; সলিতা পাকাইয়া, তেল ঢালিয়া, চকমকি কিয়া কাজ চালাইয়া থাকি— বিশেষ কোনো তাগিদ নাই, স্বতরাং দেরি হইলে কিছুই আসে যায় না । অতএব, আমাদের যেরূপ অভ্যাস তাহাতে আমার পক্ষে এই ইলেক্‌টিক আলোর ক্ষিপ্রতা সম্পূর্ণ নূতন । । ر এখনকার কালের স্ববিখ্যাত লেখক ওয়েলস’ সাহেবের দুই একখানি নভেল ও আমেরিকার সভ্যতা সম্বন্ধে একখানা বই পূর্বেই পড়িয়াছিলাম। তাহাতেই জানিতাম, ইহার চিন্তাশক্তি ইস্পাতের তরবারির মতো যেমন ঝকমক করে তেমনি তাহা খরধার। আমার বন্ধু যেদিন ইহার সঙ্গে এক-ডিনারে আমাকে নিমন্ত্রণ করেন সেদিন আমার মনের মধ্যে কেমন একটু ভয় ছিল। আমার মনে ছিল, সংসারে খরতর বুদ্ধি » sðs, sð stytt ( H. G. Wells )