পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ছেলেবেলা o @● খাৰি খেতে খেতে উঠল এসে চরে। তাকে দেখেই আমার রশিতে লাগালুৰ ফাল। জানোয়ারটা এতো বড়ো চোখ পাকিয়ে দাড়ালে আমার সামনে। সাতার কেটে তার জমে উঠেছে খিদে। আমাকে দেখে তার লাল-টকটকে জিভ দিয়ে নাল করতে লাগল। বাইরে ভিতরে অনেক মানুষের সঙ্গে তার চেনাশোনা হয়ে গেছে, কিন্তু আবদুলকে সে চেনে না। আমি ডাক দিলুম ‘আও বাচ্ছা' । সে সামনের দ্ব পা তুলে উঠতেই দিলুম তার গলায় ফাল আটকিয়ে, ছাড়াবার জন্তে তই ছটফট কয়ে ততই ফল এটে গিয়ে তার জিভ বেরিয়ে পড়ে।' ' এই পর্যন্ত শুনেই আমি ব্যস্ত হয়ে বললুম, ‘আবদুল, সে মরে গেল নাকি । আবদুল বললে, “মরবে তার বাপের সাধ্যি কী । নদীতে বান এসেছে, বাহাদুরগঞ্জে ফিরতে হবে তো ? ডিঙির সঙ্গে জুড়ে বাঘের বাচ্ছাকে দিয়ে গুণ টানিয়ে নিলেম অন্তত বিশ ক্রোশ রাস্তা। গে। গো করতে থাকে, পেটে দিই দাড়ের খোচা, দশ-পনেরো ঘণ্টার রাস্ত দেড় ঘণ্টায় পৌছিয়ে দিলে। তার পরেকার কথা আর জিগগেল কোরো না বাবা, জবাব মিলবে না।” আমি বললুম, “আচ্ছা বেশ, বাঘ তো হল, এবার কুমির ? আবদুল বললে, “জলের উপর তার নাকের ডগা দেখেছি অনেকবার। নদীর চালু ডাঙায় লম্বা হয়ে শুয়ে সে যখন রোদ পোহার, মনে হয় ভারি বিচ্ছিরি হালি হাসছে। বন্দুক থাকলে মোকাবিলা করা যেত। লাইসেন্স, ফুরিয়ে গেছে। কিন্তু মজা হল । একদিন কাচি বেদেনি ডাঙায় বলে দা দিয়ে বাখারি চাচছে, তার ছাগলছানা পাশে বাধা। কখন নদীর থেকে উঠে কুমিরটা পাঠার ঠ্যাঙ ধরে জলে টেনে নিয়ে চলল। বেদেনি একেবারে লাফ দিয়ে বলল তার পিঠের উপর। দা দিয়ে ঐ দানোগিরগিটির গলায় পোচের উপর পোচ লাগাল । ছাগলছানা ছেড়ে জৰটা ডুবে পড়ল জলে |’ আমি ব্যস্ত হয়ে বললুম, তার পরে ? আবহুল বললে, ‘তার পরেকার খবর তলিয়ে গেছে জলের তলায়, তুলে জানতে দেরি হবে। আসছে-বার যখন দেখা হবে চর পাঠিয়ে খোজ নিয়ে আসব।' কিন্তু আর তো লে জালে নি, হয়তো খোজ নিতে গেছে। এই তো ছিল পালকির ভিতর আমার সফর ; পালজির বাইরে এএফনিলি আমার মাস্টারি, রেলিঙগুলো আমার ছাত্র। ভয়ে থাকত চুপ। এক-একটা ছিল কারি দুই পড়াশুনোর কিছুই মন নেই ; ভয় দেখাই যে বড়ো হলে ফুলিগিরি করতে