পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ছেলেবেল )لا هوف রাত ফুরোত, ধাত্রা ফুরোতে চাইত না । মাঝখানে নেতিয়ে-পড়া দেহটাকে আড়কোলা করে কে যে কোথায় নিয়ে গেল জানতেও পারি নি। জানতে পারলে সে কি কম লজা। যে মানুষ বড়োদের সমান সারে বলে বকশিশ দিচ্ছে ছুড়ে, উঠোনস্থদ্ধ লোকের সামনে তাকে কিনা এমন অপমান। ঘুম যখন ভাঙল দেখি মায়ের তক্তপোশে শুয়ে আছি। বেলা হয়েছে বিস্তর, বা বা করছে রোপুর। স্থৰ উঠে গেছে অথচ আমি উঠি নি, এ ঘটে নি আর কোনোদিন । শহরে আজকাল আমোদ চলে নদীর স্রোতের মতো । মাঝে-মাঝে তার ফাক নেই। রোজই যেখানে-সেখানে যখন-তখন সিনেমা, যে খুশি ঢুকে পড়ছে সামান্ত খরচে । সেকালে যাত্রাগান ছিল যেন শুকনো গাঙে কোশ-দ্বকোশ অস্তর বালি খুঁড়ে জল তোলা ! ঘণ্টা কয়েক তার মেয়াদ, পথের লোক হঠাৎ এসে পড়ে, আঁজলা ভরে তেষ্ট নেয় মিটিয়ে । আগেকার কালটা ছিল যেন রাজপুকুর। মাঝে মাঝে পালপার্বণে যখন মর্জি হত আপন এলেকায় করত দান-খয়রাত। এখনকার কাল সদাগরের পুকুর, হরেক রকমের ঝকঝকে মাল সাজিয়ে বসেছে সদর রাস্তার চৌমাথায়। বড়ো রাস্তা থেকে খন্ধের আসে, ছোটো রাস্তা থেকেও । وهنا চাকরদের বড়োকর্তা ব্ৰজেশ্বর । ছোটোকর্তা যে ছিল তার নাম শুম— বাড়ি যশোরে, খাটি পাড়াগেয়ে, ভাষা তার কলকাতান্ধি নয় । সে বলত, তেনারা, ওনারা, খাতি হবে, বাতি হবে, মুগির ডাল, কুলির জাম্বল। ‘দোমনি ছিল তার আদরের ভাক । তার রঙ ছিল তামবৰ্ণ, বড়ো বড়ো চোখ, তেল-চুকচুকে লম্বা চুল, মজবুত দোহারা শরীর। তার স্বভাবে কড়া কিছুই ছিল না, মন ছিল সাদা। ছেলেদের পরে তার ছিল দরদ। তার কাছে আমরা ডাকাতের গল্প শুনতে পেতুম । তখন ভূতের ভয় যেমন মাজুষের মন জুড়ে ছিল তেমনি ডাকাতের গল্প ছিল ঘরে ঘরে। ডাকাতি এখনো কম হয় না—খুনও হয়, জখমও হয়, লুঠও হয়, পুলিলও ঠিক লোককে ধরে না । কিন্তু এ হল খবর, এতে গল্পের মজা নেই। তখনকার ডাকাতি গল্পে উঠেছিল দানা বেঁধে, অনেকদিন পর্যন্ত মুখে মুখে চারিয়ে গেছে। আমরা যখন জন্মেছি তখনো এমন সব লোক দেখা বেত বার সমর্থ বলে ছিল ভাকাতের দলে। মন্ত মন্ত লব লাঠিাল, সঙ্গে সঙ্গে চলে লাঠিখেলার সাজেদ । তাদের নাম শুনলেই লোকে সেলাম করত। প্রায়ই ডাকাতি