পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ꮌ ᎼᏔ% রবীন্দ্র-রচনাবলী মেয়েটি বিনয়ের মুখের দিকে চাহিয়া কহিল, “একটা গাড়ি—” বৃদ্ধ সংকুচিত হইয়া কহিলেন, “আবার কেন ওঁকে ব্যস্ত করা ? আমাদের বাসা তো কাছেই, এটুকু হেঁটেই যাব।” মেয়েটি বলিল, “না বাবা, সে হতে পারে না ।” বৃদ্ধ ইহার উপর কোনো কথা কহিলেন না এবং বিনয় নিজে গিয়া গাড়ি ডাকিয়া আনিল । গাড়িতে উঠিবার পূর্বে বৃদ্ধ তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, "আপনার নামটি কী ?” বিনয় । আমার নাম বিনয়ভূষণ চট্টোপাধ্যায় । বৃদ্ধ কহিলেন, “আমার নাম পরেশচন্দ্র ভট্টাচার্য। নিকটেই ৭৮ নম্বর বাড়িতে থাকি। কখনে অবকাশমত যদি আমাদের ওপানে যান তো বড়ো খুশি হব।" মেয়েটি বিনয়ের মুখের দিকে দুই চোখ তুলিয়া নীরবে এই অনুরোধের সমর্থন করিল। বিনয় তখনই সেই গাড়িতে উঠিয়া তাহীদের বাড়িতে যঠিতে প্রস্থত ছিল, কিন্তু সেটা ঠিক শিষ্টাচার হইবে কি না ভাবিয়া ন পইয়া দঁাড়াইয়া রহিল । গাড়ি ছাড়িবার সময় মেয়েটি বিনয়কে ছোটো একটি নমস্কার করিল । এই নমস্কারের জন্য বিনয় একেবারেই প্রস্থত ছিল না, এইজন্য হতবুদ্ধি হইয় সে প্রতিনমস্কার করিতে পারিল না । এইটুকু ক্রটি লইয়া বাড়িতে ফিরিয়া সে নিজেকে বার বার ধিক্কার দিতে লাগিল । ইহাদের সঙ্গে সাক্ষাং ইষ্টতে বিদায় হওয়া পযস্ত বিনয় নিজের আচরণ সমস্তটা আলোচনা করিয়া দেখিল ; মনে হইল, আগাগোড় তাহার সমস্ত ব্যবহারেই অসভ্যতা প্রকাশ পাইয়াছে। কোন কোন সময়ে কী করা উচিত ছিল, কী বলা উচিত ছিল, তাহা লষ্টয়া মনে মনে কেবলই বৃথা আন্দোলন করিতে লাগিল । ঘরে ফিরিয়া আসিয়া দেখিল, যে রুমাল দিয়া মেয়েটি তাহার বাপের মুথ মুছাইয়া দিয়াছিল সেই রুমালটি বিছানার উপর পড়িয়া আছে– সেটা তাড়াতাড়ি তুলিয়া লইল । তাছার মনের মধ্যে বাউলের সুরে ওই গানটা বাজিতে লাগিল— খাচার ভিতর অচিন পাখি কমনে আসে যায় । বেলা বাড়িয়া চলিল, বর্ষার রৌদ্র প্রখর হষ্টয়া উঠিল, গাড়ির স্রোত অপিসের দিকে বেগে ছুটিতে লাগিল, বিনয় তাহার দিনের কোনে কাজেই মন দিতে পারিল না। এমন অপূর্ব আনন্দের সঙ্গে এমন নিবিড় বেদন তাহার বয়সে কখনো সে ভোগ করে নাই। তাহার এই ক্ষুদ্র বাস এবং চারি দিকের কুংসিত কলিকাতা মায়াপুরীর মতো হইয়া উঠিল ; যে রাজ্যে অসম্ভব সম্ভব হয়, অসাধ্য সিদ্ধ হয় এবং অপরূপ রূপ লইয়া দেখা দেয়, বিনয় যেন সেই নিয়ম-ছাড়া রাজ্যে ফিরিতেছে। এই