পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা 〉ó" মাস্টার-পণ্ডিতের জীবন অলঙ্ক করিয়া তোলাই তাছার প্রধান কাজ এবং আমোদ ছিল। একটু বয়স হইতেই সে ছাত্রদের ক্লাবে ‘স্বাধীনতাহীনতার কে বাচিতে চায় হে’ এবং বিংশতি কোটি মানবের বাস আওড়াইয়া, ইংরেজি ভাষায় বক্তৃতা করিয়া ক্ষুদ্র বিদ্রোহীদের দলপতি হইয়া উঠিল। অবশেষে যখন এক সময় ছাত্রসভার ডিম্ব ভেদ করিয়া গোরা বয়স্কসভায় কাকলি বিস্তার করিতে আরম্ভ করিল তখন কৃষ্ণদয়ালবাবুর কাছে সেটা অত্যন্ত কৌতুকের বিষয় বলিয়া মনে হইল । বাহিরের লোকের কাছে গোরার প্রতিপত্তি দেখিতে দেখিতে বাড়িয়া উঠিল ; কিন্তু ঘরে কাহারও কাছে সে বড়ো অমিল পাইল না । মহিম তখন চাকরি করে— সে গোরাকে কখনো বা পেট য়ট-জ্যাঠা কখনো বা ‘হরিশ মুখুজ্জে দি সেকেণ্ড বলিয়। BSBKBBB BBB BBBB BCK BBBBB S BBB BBB BB BBB KBB BBB মাঝে হাতাহাতি হইবার উপক্রম হইত। আনন্দময়ী গেরিার ইংরেজ-বিদ্বেষে মনে মনে অত্যস্ত উর্দুবেগ অল্প ভব করিতেন । তাহ কে নানা প্রকারে ঠাণ্ডা করিবার চেষ্টা করিতেন, কিন্তু কোনে ফলই হইত না । গোর রাস্তায় ঘাটে কোনো সুযোগে ইংরেজের সঙ্গে মার মারি করিতে পরিলে জীবন ধন্য মনে করিত । এ দিকে কেশববাবুর বক্তৃতায় মুগ্ধ হইয়া গোরা ব্রাহ্মসমাজের প্রতি বিশেষভাবে অfকুষ্ট হইয়া পড়িল ; আবার এই সময়টাতেই কৃষ্ণদয়াল ঘোরতর অচিারনিষ্ঠ হইয়া উঠিলেন । এমন কি, গোরা তাহার ঘরে গেলেও তিনি ব্যতিব্যস্ত হইয়া উঠিতেন । গুটি দুই-তিন ঘর লইয়া তিনি নিজের মহল স্বতন্ত্র করিয়া রাপিলেন । ঘটা করিয়| সেই মহলের দ্বারের কাছে "সাধনা শ্রম" নাম লিখিয়া কাচফলক লটকাইয়া দিলেন । বাপের এই কা গুকারখানায় গোরার মন বিদ্রোহী হইয়া উঠিল । সে বলিল, "আমি এ সমস্ত মূঢ়তা সহ করিতে পারি না—এ আমার চক্ষুশূল ।” এই উপলক্ষে গোরা তাহ1র বাপের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করিয়া একেবারে বাহির হইয়া ধাইবার উপক্রম করিয়াছিল— আনন্দময়ী তাহাকে কোনো রকমে ঠেকাইয়া রাখিয়াছিলেন । বীপের কাছে যে-সকল ব্রাহ্মণপণ্ডিতের সমাগম হইতে লাগিল গোরা জে পাইলেই তাহাদের সঙ্গে তর্ক বাধাইয়া দিত। সে তো তর্ক নয়, প্রায় ঘুষি বলিলেই হয়। উfহাদের অনেকেরই পাণ্ডিত্য অতি যংসামান্ত এবং অর্থলোভ অপরিমিত ছিল ; গোরাকে তাহারা পারিয়া উঠিতেন না, তাহাকে বাঘের মতো ভয় করিতেন । ইহাদের মধ্যে কেবল হরচন্দ্র বিদ্যাবাগীশের প্রতি গোরার শ্রদ্ধা জন্মিল ।