পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা ఫిలిపి কিছুক্ষণ কেহ কোনো কথা কহিতে না পারিয়া সকলেই একপ্রকার কুষ্ঠিত হইয়া পড়িল । তখন বিনয় স্বচরিতার দিকে চাহিয়া কহিল “সেদিন আমাদের কথা হচ্ছিল” —বলিয়া একটা কথা উত্থাপন করিয়া দিল । সে কহিল, “আপনাকে তে বলেইছি, আমার এমন একদিন ছিল যখন আমার মনে বিশ্বাস ছিল, আমাদের দেশের জন্তে, সমাজের জন্তে, আমাদের কিছুই আশা করবার নেই— চিরদিনই আমরা নাবালকের মতে কাটাৰ এৰং ইংরেজ আমাদের অছি নিযুক্ত হয়ে থাকবে— যেখানে যা যেমন আছে সেইরকমই থেকে যাবে— ইংরেজের প্রবল শক্তি এবং সমাজের প্রবল জড়তার বিরুদ্ধে আমাদের কোথাও কোনো উপায়ুমাত্র নেই । আমাদের দেশের অধিকাংশ লোকেরই এইরকম মনের ভাব । এমন অবস্থায় মানুষ, হয় নিজের স্বাৰ্থ নিয়েই থাকে নয় উদাসীনভাবে কাটায় । আমাদের দেশের মধ্যবিত্ত লোকেরা এই কারণেই চাকরির উন্নতি ছাড়া অ}র-কোনো কথা ভাবে না, ধনী লোকেরা গবর্মেন্টের খেতাব পেলেই জীবন সার্থক বোধ করে— আমাদের জীবনের যাত্রাপথটা অল্প একটু দূরে গিয়েই, বাস্, ঠেকে যায়— স্বতরাং মুদূর উদ্দেশ্বের কল্পনাও আমাদের মাথায় আসে না, আর তার পাথেয়-সংগ্রহ ও অনবহুক বলে মনে করি । আমিও এক সময়ে ঠিক করেছিলুম গোরার বাবাকে মুকুব্বি ধরে একটা চাকরির যোগাড় করে নেব । এমন সময় গোরা আমাকে বললে— না, গবর্ষেন্টের চাকরি তুমি কোনোমতেই করতে পারবে না ।" গোরা এই কথায় স্নচরিতার মুখে একটুখানি বিস্ময়ের আভাস দেখিয়া কহিল, “আপনি মনে করবেন না গবর্মেন্টের উপর রাগ ক’রে আমি এমন কথা বলছি । গবর্মেন্টের কাজ যারা করে তারা গবর্মেন্টের শক্তিকে নিজের শক্তি বলে একটা গৰ বোধ করে এবং দেশের লোকের থেকে একটা ভিন্ন শ্রেণীর ছয়ে ওঠে— ষত দিন যাচ্ছে আমাদের এই ভাবটা ততই বেড়ে উঠছে । আমি জানি আমার একটি আত্মীয় সাবেক কালের ডেপুটি ছিলেন– এখন তিনি কাজ ছেড়ে দিয়ে বসে আছেন। উকে তিটিই ম্যাজিস্ট্রেট জিজ্ঞাসা করেছিলেন— বাবু, তোমার বিচারে এত বেশি লোক খালাসী পায় কেন ? তিনি জবাব দিয়েছিলেন– সাহেব, তার একটি কারণ আছে ; তুমি যাদের জেলে দাও তারা তোমার পক্ষে কুকুর-বিড়াল মাত্র, আর আমি ষাদের ছেলে দিই তারা যে আমার ভাই হয়। এভবড়ো কথা বলতে পারে এমন ডেপুটি তখনো ছিল এবং শুনতে পারে এমন ইংরেজ ম্যাজিস্ট্রেটেরও অভাব ছিল না । কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে চাকরির গড়াছড়ি অঙ্কের ভূষণ হয়ে উঠছে এবং এখনকার ডেপুটির কাছে তার দেশের লোক ক্রমেই কুকুর-বিড়াল হয়ে ধাড়াচ্ছে ; এবং এমনি করে পদের উন্নতি