পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ゆ次br রবীন্দ্র-রচনাবলী মিশিয়া ছিল । তাহার গোরা কি যে-লে গোরা ! ম্যাজিস্ট্রেট তাহার কন্থর মাপ করিয়া তাহাকে দয়া করিয়া ছাড়িয়া দিবেন, সে কি তেমনি গোরা ! লে ষে অপরাধ সমস্ত স্বীকার করিয়া জেলের দুঃখ ইচ্ছা করিয়া নিজের কাধে তুলিয়া লইয়াছে। তাহার সে দুঃখের জন্ত কাহারও সহিত কোনো কলহ করিবার নাই । গোরা তাহা অকাতরে বহন করিতেছে এবং আনন্দময়ীও ইহা সহ করিতে পারিবেন । ললিতা আশ্চর্য হইয়া আনন্দময়ীর মুখের দিকে চাহিয়া রহিল। ব্রাহ্মপরিবারের সংস্কার ললিতার মনে খুব দৃঢ় ছিল ; ষে মেয়েরা আধুনিক প্রথায় শিক্ষা পায় নাই এবং যাহাদিগকে লে ‘হিদুবাড়ির মেয়ে’ বলিয়া জানিত তাহাদের প্রতি ললিতার শ্রদ্ধা ছিল না । শিশুকালে বরদাসুন্দরী তাঁহাদের যে অপরাধের প্রতি লক্ষ্য করিয়া বলিতেন ‘হিছবাড়ির মেয়েরাও এমন কাজ করে না’ সে অপরাধের জন্য ললিতা বরাবর একটু বিশেষ করিয়াই মাথা হেঁট করিয়াছে । আজ আনন্দময়ীর মুখের কয়টি কথা শুনিয়া তাছার অন্ত:কৰণ বার বার করিয়া বিস্ময় অনুভব করিতেছে । যেমন বল তেমনি শাস্তি, তেমনি আশ্চর্য সদবিবেচনা । অসংষত হৃদয়াবেগের জন্ত ললিতা নিজেকে এই রমণীর কাছে খুবই খর্ব করিয়া অনুভব করিল। তাহার মনের ভিতরে আজ ভারি একটা ক্ষুব্ধতা ছিল, সেই জন্ত সে বিনয়ের মুখের দিকে চায় নাই, তাহার সঙ্গে কথাও কয় নাই। কিন্তু আনন্দময়ীর স্নেহে করুণায় ও শাস্তিতে মণ্ডিত মুখখানির দিকে চাহিয় তাহার বুকের ভিতরকার সমস্ত বিদ্রোহের তাপ যেন জুড়াইয়া গেল— চারি দিকের সকলের সঙ্গে তাহার সম্বন্ধ সহজ হইয়া আসিল । ললিতা আনন্দময়ীকে কহিল, "গৌরবাবু যে এত শক্তি কোথা থেকে পেয়েছেন তা আপনাকে দেখে আজ বুঝতে পারলুম।” আনন্দময়ী কছিলেন, “ঠিক বোঝ নি। গোরা যদি আমার সাধারণ ছেলের মতো হত তা হলে আমি কোথা থেকে বল পেতুম ! তা হলে কি তার দুঃখ আমি এমন করে সহ করতে পারতুম !” ললিতার মনটা আজ কেন যে এতটা বিকল হইয়া উঠিয়ছিল তাহার একটু ইতিহাস বলা আবশ্যক । এ কয়দিন প্রত্যহ সকালে বিছানা হইতে উঠিয়াই প্রথম কথা ললিতার মনে এই জাগিয়াছে যে, আজ বিনয়বাবু আলিবেন না । অথচ সমস্ত দিনই তাহার মন এক মুহূর্তের জন্যও বিনয়ের আগমন প্রতীক্ষা করিতে ছাড়ে নাই । ক্ষণে ক্ষণে লে কেবলই মনে করিয়াছে বিনয় হয়তো আসিয়াছে, হয়তো সে উপরে না জাসিয়া নীচের ঘরে পরেশবাবুর সঙ্গে কথা কহিতেছে। এই জন্য দিনের মধ্যে কতবার সে অকারণে এ ঘরে