পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Q8b- রবীন্দ্র-রচনাবলী পরেশবাবু কহিলেন, “তাও যদি সম্ভব হয় তবে তা নিয়ে উংপাত করলে কি তার কোনো প্রতিকার হবে ?” 略 হারানবাৰু কহিলেন, “স্রোতে যে লোক ভেসে যাচ্ছে তাকে কি ডাঙায় তোলবার চেষ্টাও করতে হবে না ?” পরেশবাবু কহিলেন, “সকলে মিলে তার মাথার উপর ঢেলা ছুড়ে মারাকেই ডাঙায় তোলবার চেষ্টা বলা যায় না। পাম্বাবু, আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন, আমি এতটুকুবেলা থেকেই স্বচরিতাকে দেখে আসছি। ও যদি জলেই পড়ত তা হলে আমি আপনাদের সকলের আগেই জানতে পারতুম এবং আমি উদাসীন থাকতুম না ।” হারানবাবু কহিলেন, “স্বচরিতা তো এখানেই রয়েছেন। আপনি ওঁকেই জিজ্ঞাসা করুন-না। শুনতে পাই উনি সকলের ছোওয়া খান না । সে কথা কি মিথ্যা ?” স্বচরিতা দোয়াতদানের প্রতি অনাবশ্বক মনোযোগ দূর করিয়া কহিল, “বাবা জানেন আমি সকলের ছোওয়া খাই নে । উনি যদি আমার এই আচরণ সহ করে থাকেন তা হলেই হল । আপনাদের যদি ভালো না লাগে আপনার যত খুশি আমার নিন্দ করুন, কিন্তু বাবাকে বিরক্ত করছেন কেন ? উনি আপনাদের কত ক্ষমা করে চলেন তা আপনার জানেন ? এ কি তারই প্রতিফল ?” হারানবাবু আশ্চর্য হইয়া ভাবিতে লাগিলেন– স্বচরিতাও আজকাল কথা কহিতে শিখিয়াছে ! পরেশবাবু শাস্তিপ্রিয় লোক ; তিনি নিজের বা পরের সম্বন্ধে অধিক আলোচনা ভালোবাসেন না । এপর্যন্ত ব্রাহ্মসমাজে তিনি কোনো কাজে কোনো প্রধান পদ গ্রহণ করেন নাই ; নিজেকে কাহারও লক্ষগোচর না করিয়া নিভৃতে জীবন যাপন করিয়াছেন । হারানবাবু পরেশের এই ভাবকেই উৎসাহহীনতা ও ঔদাসীন্য বলিয় গণ্য করিতেন, এমন-কি, পরেশবাবুকে তিনি ইহা লইয়া ভংগনাও করিয়াছেন । ইহার উত্তরে পরেশবাবু বলিয়াছিলেন– “ঈশ্বর, সচল এবং অচল এই দুই শ্রেণীর পদার্থই সৃষ্টি করিয়াছেন। আমি নিতাস্তই অচল । আমার মতো লোকের দ্বারা যে কাজ পাওয়া সম্ভব ঈশ্বর তাহা আদায় করিয়া লইবেন । যাহা সম্ভব নহে তাহার জন্ত চঞ্চল হইয়া কোনো লাভ নাই । আমার বয়স যথেষ্ট হইয়াছে ; আমার কী শক্তি আছে আর কী নাই তাহার মীমাংসা হইয়া গিয়াছে। এখন আমাকে ঠেলাঠেলি করিয়া কোনো ফল পাওয়া যাইবে না।’ হারানবাবুর ধারণা ছিল তিনি অসাড় হৃদয়েও উৎসাহ সঞ্চার করিতে পারেন ;