পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

లు: রবীন্দ্র রচনাবলী প্রতি র্তাহার ক্রোধ অত্যন্ত দুর্দান্ত হইয়া উঠিল। র্তাহার গৃহের মধ্যে হরিমোহিনীর অস্তিত্ব র্তাহাকে উঠিতে বসিতে যন্ত্রণা দিতে লাগিল । সেদিন তাহার পিতার মৃত্যুদিনের বার্ষিক উপাসনা উপলক্ষ্যে তিনি বিনয়কে নিমন্ত্ৰণ করিয়াছিলেন। উপাসনা সন্ধ্যার সময় হইবে, তংপূর্বেই তিনি সভাগৃহ সাজাইয়। রাখিতেছিলেন ; স্বচরিতা এবং অন্ত মেয়েরাও র্তাহার সহায়তা করিতেছিল । এমন সময় তাহার চোখে পড়িল বিনয় পাশের সিড়ি দিয়া উপরে হরিমোহিনীর নিকট যাইতেছে । মন যখন ভারাক্রাস্ত থাকে তখন ক্ষুদ্র ঘটনাও বড়ো হইয়া উঠে । বিনয়ের এই উপরের ঘরে যাওয়া এক মুহূর্তে র্তাহার কাছে এমন অসহ হইয়া উঠিল যে তিনি ঘর সাজানো ফেলিয়া তৎক্ষণাৎ হরিমোহিনীর কাছে গিয়া উপস্থিত হইলেন । দেখিলেন, বিনয় মাদুরে বসিয়া আত্মীয়ের ন্যায় বিশ্রদ্ধভাবে হরিমোহিনীর সহিত কথা কহিতেছে। বরদাসুন্দরী বলিয়া উঠিলেন, “দেখো, তুমি আমাদের এখানে যতদিন খুশি থাকো, আমি তোমাকে আদর যত্ন করেই রাখব। কিন্তু আমি বলছি, তোমার ওই ঠাকুরকে এখানে রাখা চলবে না ।” হরিমোহিনী চিরকাল পাড়াগায়েই থাকিতেন । ব্রাহ্মদের সম্বন্ধে তাহার ধারণা ছিল যে, তাহারা খৃস্টানেরই শাখাবিশেষ, সুতরাং ত্যহাদেরই সংস্রব সম্বন্ধে বিচার করিবার বিষয় আছে । কিন্তু তাহারাও যে র্তাহার সম্বন্ধে সংকোচ অনুভব করিতে পারে ইহা তিনি এই কয় দিনে ক্রমশই বুঝিতে পারিতেছিলেন। কী করা কর্তব্য ব্যাকুল হইয়া চিন্তা করিতেছিলেন, এমন সময়ে আজ বরদাসুন্দরীর মুখে এই কথা শুনিয়া তিনি বুঝিলেন যে, আর চিন্তা করিবার সময় নাই— যাহা হয় একটা-কিছু স্থির করিতে হইবে । প্রথমে ভাবিলেন কলিকাতায় একটা কোথাও বাসা লইয়া থাকিবেন, তাহা হইলে মাঝে মাঝে স্বচরিতা ও সতীশকে দেখিতে পাইবেন । কিন্তু তাহার ষে অল্প সম্বল তাহাতে কলিকাতার খরচ চলিবে না । বরদাসুন্দরী অকস্মাৎ ঝড়ের মতো আসিয়া যখন চলিয়া গেলেন, তখন বিনয় মাথা হেঁট করিয়া চুপ করিয়া বসিয়া রহিল। 幽 কিছুক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া হরিমোহিনী বলিয়া উঠিলেন, “আমি তীর্থে যাব, তোমরা কেউ আমাকে পৌছে দিয়ে আসতে পারবে বাবা ?” বিনয় কহিল, “খুব পারব। কিন্তু তার আয়োজন করতে তো দু-চার দিন দেরি হবে, ততদিন চলো মালি, তুমি আমার মার কাছে গিয়ে থাকবে ।”