পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

888 রবীন্দ্র-রচনাবলী আনন্দ হইল না কেন ? তাহার ভিতরে ভিতরে ভারি একটা ইচ্ছা হইয়াছিল, এবার যেন পরেশবাবুর রীতিমত একটা শিক্ষা হয়। র্তাহার স্বামীকে প্রচুর অমৃতাপ করিতে হইবে এই ভবিষ্যদবাণী তিনি খুব জোরের সঙ্গে বার বার ঘোষণা করিয়াছিলেন । সেইজন্ত সামাজিক আন্দোলনে পরেশবাৰু যথেষ্ট বিচলিত হইতেছিলেন না দেখিয়া বরদাসুন্দরী মনে মনে অত্যন্ত অসহিষ্ণু হইয়া উঠিতেছিলেন । হেনকালে সমস্ত সংকটের এমন সুচারুরূপে মীমাংসা হইয়া যাইবে ইহা বরদাসুন্দরীর কাছে বিশুদ্ধপ্রীতিকর হয় নাই। তিনি মুখ গম্ভীর করিয়া কহিলেন, “এই দীক্ষার প্রস্তাবটা আর কিছুদিন আগে যদি হত তা হলে আমাদের এত অপমান এত দুঃখ পেতে হত না ।” পরেশবাবু কহিলেন, “আমাদের দুঃখকষ্ট-অপমানের তো কোনো কথা হচ্ছে না, বিনয় দীক্ষা নিতে চাচ্ছেন।” বরদাসুন্দরী বলিয়া উঠিলেন, “শুধু দীক্ষা ?” বিনয় কহিলেন, “অস্তৰ্যামী জানেন আপনাদের দুঃখ-অপমান সমস্তই আমার ।” পরেশ কহিলেন, “দেখে বিনয়, তুমি ধর্মে দীক্ষা নিতে যে চাচ্ছ সেটাকে একটা অবাস্তর বিষয় কোরো না । আমি তোমাকে পূর্বেও এক দিন বলেছি, আমরা একটা কোনো সামাজিক সংকটে পড়েছি কল্পনা করে তুমি কোনো গুরুতর ব্যাপারে প্রবৃত্ত হোয়ো না ।” বরদাসুন্দরী কহিলেন, “সে তে ঠিক কথা । কিন্তু তাও বলি, আমাদের সকলকে জালে জড়িয়ে ফেলে চুপ করে বসে থাকাও ওঁর কর্তব্য নয়।” পরেশবাবু কহিলেন, "চুপ করে না থেকে চঞ্চল হয়ে উঠলে জালে আরও বেশি করে গ্রন্থি পড়ে । কিছু একটা করাকেই যে কৰ্তব্য বলে তা নয়, অনেক সময়ে কিছু না করাই হচ্ছে সকলের চেয়ে বড়ো কর্তব্য ।” বরদাসুন্দরী কহিলেন, “তা হবে, আমি মূর্থ মানুষ, সব কথা ভালো বুঝতে পারি নে। এপন কী স্থির হল সেই কথাটা জেনে যেতে চাই— আমার অনেক কাজ আছে ।” বিনয় কহিল, ‘পরশু রবিবারেই আমি দীক্ষা গ্রহণ করব । আমার ইচ্ছা যদি পরেশবাবু—” পরেশবাবু কহিলেন, “যে দীক্ষার কোনো ফল আমার পরিবার আশা করতে পারে সে দীক্ষা আমার দ্বারা হতে পারবে না । ব্রাহ্মসমাজে তোমাকে আবেদন করতে হবে ।” বিনয়ের মন তৎক্ষণাৎ সংকুচিত হইয়া গেল । ব্রাহ্মসমাজে দস্তুরমত দীক্ষার