পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা (? o (? টানাটানি করবে। যা হয়ে গেছে তা হয়ে গেছে ; যতটা সামলে চলতে পার চলো, না পারো তাতেও বিশেষ কোনো দোষ হবে না ।” কৃষ্ণদয়াল ঠিক করিয়া রাখিয়াছিলেন র্তাহার মৃত্যুর পরে যা হয় তা হোক— ইতিমধ্যে তিনি নিজে স্বতন্ত্র হইয়া থাকিবেন । তার পরে অজ্ঞাতসারে অন্তের কী ঘটতেছে সে দিকে দৃষ্টিপাত না করিলেই এক-রকম চলিয়া যাইবে । কী করা কর্তব্য কিছুই স্থির করিতে না পারিয়া বিমৰ্ধমুখে আনন্দময়ী উঠিলেন । ক্ষণকাল দাড়াইয়া কহিলেন, “তোমার শরীর কী রকম হয়ে যাচ্ছে দেখছ না ?” আনন্দময়ীর এই মূঢ়তায় কৃষ্ণদয়াল অত্যন্ত উচ্চভাবে একটুখানি হাস্ত করিলেন এবং কহিলেন, "শরীর ” এ সম্বন্ধে আলোচনা কোনো সস্তোষজনক সিদ্ধান্তে আসিয়া পৌছিল না, এবং কৃষ্ণদয়াল পুনশ্চ ঘেরগুসংহিতায় মনোনিবেশ করিলেন । এ দিকে তাহার সন্ন্যাসীটিকে লইয়। মহিম তখন বাহিরের ঘরে বসিয়া অত্যস্ত উচ্চ অঙ্গের পরমার্থতত্ত্ব-আলোচনায় প্রবৃত্ত ছিলেন । গৃহীদের মুক্তি আছে কিনা অতিশয় বিনীত ব্যাকুলম্বরে এই প্রশ্ন তুলিয়া তিনি করজোড়ে অবহিত হইয়া এমনি একান্ত ভক্তি ও আগ্রহের ভাবে তাহার উত্তর শুনিতে বসিয়াছিলেন যেন মুক্তি পাইবার জন্য তাহার যাহা-কিছু আছে সমস্তই তিনি নিঃশেষে পণ করিয়া বসিয়াছেন । গৃহীদের মুক্তি নাই কিন্তু স্বৰ্গ আছে এই কথা বলিয়া সন্ন্যাসী মহিমকে কোনোপ্রকারে শাস্ত করার চেষ্টা করিতেছেন, কিন্তু মহিম কিছুতেই সাম্বন মানিতেছেন না । মুক্তি র্তাহার নিতান্তই চাই, স্বর্গে তাহার কোনো প্রয়োজন নাই । কোনোমতে কন্যাটার বিবাহ দিতে পারিলেই সন্ন্যাসীর পদসেবা করিয়া তিনি মুক্তির সাধনায় উঠিয়া-পড়িয়া লাগিবেন ; কাহার সাধ্য আছে ইহা হইতে র্তাহাকে নিরস্ত করে । কিন্তু কস্তার বিবাহ তো সহজ ব্যাপার নয়— এক, যদি বাবা দয়া করেন । \ყ8 মাঝখানে নিজের একটুখানি আত্মবিশ্বতি ঘটিয়াছিল এই কথা স্মরণ করিয়া গোরা পূর্বের চেয়ে আরও বেশি কড়া হইয়া উঠিল। সে ষে সমাজকে ভুলিয়া প্রবল একটা মোহে অভিভূত হইয়াছিল নিয়মপালনের শৈথিল্যকেই সে তাহার কারণ বলিয়া স্থির করিয়াছিল। 职· সকালবেলায় সন্ধ্যাহিক সারিয়া গোরা ঘরের মধ্যে আসিতেই দেখিল, পরেশবাবু বসিয়া আছেন। তাহার বুকের ভিতরে যেন একটা বিদ্যুৎ খেলিয়া গেল ; পরেশের