পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

QXbr রবীন্দ্র-রচনাবলী বলেইছি এগুলি গুরুতর কারণ নয়, এগুলি বাহ কারণ মাত্র। এ বাধাগুলোকে না মানলেও চলে। কিন্তু ভিতরের একটা গভীর কারণ আছে। হিন্দুসমাজে প্রবেশের কোনো পথ নেই। অন্তত সদর রাস্তা নেই, খিড়কির দরজা থাকতেও পারে। এ সমাজ সমস্ত মানুষের সমাজ নয়— দৈববশে যারা হিন্দু হয়ে জন্মাবে এ সমাজ কেবলমাত্র তাদের ” স্বচরিত কহিল, “সব সমাজই তো তাই।” পরেশ কহিলেন, “না, কোনো বড়ো সমাজই তা নয়। মুসলমান সমাজের সিংহদ্বার সমস্ত মানুষের জন্যে উদঘাটিত, খৃস্টান সমাজও সকলকেই আহবান করছে। যেসকল সমাজ খৃস্টান সমাজের অঙ্গ তাদের মধ্যেও সেই বিধি। যদি আমি ইংরেজ হতে চাই তবে সে একেবারে অসম্ভব নয় ; ইংলণ্ডে বাস করে আমি নিয়ম পালন করে চললে ইংরেজ-সমাজ-ভূক্ত হতে পারি, এমন-কি সেজন্তে আমার খৃস্টান হবারও দরকার নেই। অভিমন্ত্য বৃহের মধ্যে প্রবেশ করতে জানত, বেরোতে জানত না ; হিন্দু ঠিক তার উলটাে । তার সমাজে প্রবেশ করবার পথ একেবারে বন্ধ, বেরোবার পথ শতসহস্র ” স্বচরিতা কহিল, “তবু তো, বাবা, এত দিনেও হিন্দুর ক্ষয় হয় নি, সে তো টিকে আছে।” পরেশ কহিলেন, “সমাজের ক্ষয় বুঝতে সময় লাগে । ইতিপূর্বে হিন্দুসমাজের খিড়কির দরজা খোল ছিল। তখন এ দেশের অনার্য জাতি হিন্দুসমাজের মধ্যে প্রবেশ করে একটা গৌরব বোধ করত। এ দিকে মুসলমানের আমলে দেশের প্রায় সর্বত্রই হিন্দু রাজা ও জমিদারের প্রভাব যথেষ্ট ছিল, এইজন্তে সমাজ থেকে কারও সহজে বেরিয়ে যাবার বিরুদ্ধে শাসন ও বাধার সীমা ছিল না । এখন ইংরেজঅধিকারে সকলকেই আইনের দ্বারা রক্ষা করছে, সে-রকম কৃত্রিম উপায়ে সমাজের দ্বার আগলে থাকবার জো এখন আর তেমন নেই। সেইজন্ত কিছুকাল থেকে কেবলই দেখা যাচ্ছে, ভারতবর্ষে হিন্দু কমছে আর মুসলমান বাড়ছে। এরকমভাবে চললে ক্রমে এ দেশ মুসলমান-প্রধান হয়ে উঠবে, তখন একে হিন্দুস্থান বলাই অস্তায় হবে।” স্বচরিতা ব্যথিত হইয়া উঠিয়া কহিল, “বাবা, এটা কি নিবারণ করাই আমাদের সকলের উচিত হবে না ? আমরাও কি হিন্দুকে পরিত্যাগ করে তার ক্ষয়কে বাড়িয়ে তুলব ? এখনই তো তাকে প্রাণপণ শক্তিতে অঁাকড়ে থাকবার সময় ।” পরেশবাবু সস্নেহে স্বচরিতার পিঠে হাত বুলাইয়া কহিলেন, “আমরা ইচ্ছা করলেই কি কাউকে অঁাকড়ে ধরে বাচিয়ে রাখতে পারি? রক্ষা পাবার জন্য একটা জাগতিক