পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা (t)ఏ নিয়ম আছে– সেই স্বভাবের নিয়মকে যে পরিত্যাগ করে সকলেই তাকে স্বভাবতই পরিত্যাগ করে । হিন্দুসমাজ মানুষকে অপমান করে, বর্জন করে, এইজন্তে এখনকার দিনে আত্মরক্ষা করা তার পক্ষে প্রত্যহই কঠিন হয়ে উঠছে। কেননা, এখন তো আর সে আড়ালে বসে থাকতে পারবে না— এখন পৃথিবীর চার দিকের রাস্তা খুলে গেছে, চার দিক থেকে মহিষ তার উপরে এসে পড়ছে ; এখন শাস্ত্র-সংহিতা দিয়ে বাধ বেঁধে প্রাচীর তুলে সে আপনাকে সকলের সংস্রব থেকে কোনোমতে ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। হিন্দুসমাজ এখনো যদি নিজের মধ্যে সংগ্রহ করবার শক্তি না জাগায়, ক্ষয়রোগকেই প্রশ্রয় দেয়, তা হলে বাহিরের মামুষের এই অবাধ সংস্রব তার পক্ষে একটা সাংঘাতিক আঘাত হয়ে দাড়াবে।” - I স্বচরিতা বেদনার সহিত বলিয়া উঠিল, “আমি এ-সব কিছু বুঝি নে, কিন্তু এই যদি সত্য হয় একে আজ সবাই ত্যাগ করতে বসেছে, তা হলে এমন দিনে একে আমি তো ত্যাগ করতে বসব না। আমরা এর দুর্দিনের সস্তান বলেই তো এর শিয়রের কাছে আমাদের আজ দাড়িয়ে থাকতে হবে ।” পরেশবাবু কহিলেন, “মা, তোমার মনে যে ভাব জেগে উঠেছে আমি তার বিরুদ্ধে কোনো কথা তুলব না । তুমি উপাসনা করে মন স্থির করে তোমার মধ্যে যে সত্য আছে, যে শ্রেয়ের আদশ অাছে, তারই সঙ্গে মিলিয়ে সব কথা বিচার করে দেখো— ক্রমে ক্রমে তোমার কাছে সমস্ত পরিষ্কার হয়ে উঠবে । যিনি সকলের চেয়ে বড়ো তাকে দেশের কাছে কিম্বা কোনো মামুষের কাছে থাটো কোরো না— তাতে তোমারও মঙ্গল না, দেশেরও না । আমি এই মনে করে একান্তচিত্তে র্তারই কাছে আত্মসমপণ করতে চাই ; তা হলেই দেশের এবং প্রত্যেক লোকের সম্বন্ধেই আমি সহজেই সত্য হতে পারব।” এমন সময় একজন লোক পরেশবাবুর হাতে একখানি চিঠি আনিয়া দিল । পরেশবাবু কহিলেন, “চশমাটা নেই, আলোও কমে গেছে— চিঠিখানা পড়ে দেখো দেখি ।” স্বচরিতা চিঠি পড়িয়া তাহাকে শুনাইল । ব্রাহ্মসমাজের এক কমিটি হইতে তাহার কাছে পত্রটি আসিয়াছে, নীচে অনেকগুলি ব্রাহ্মের নাম সহি করা আছে । পত্রের মর্ম এই যে, পরেশ অব্রাহ্ম মতে র্তাহার কস্তার বিবাহে সম্মতি দিয়াছেন এবং সেই বিবাহে নিজেও যোগ দিতে প্রস্তুত হইয়াছেন । এরূপ অবস্থায় ব্রাহ্মসমাজ কোনোমতেই তাহাকে সভ্যশ্রেণীর মধ্যে গণ্য করিতে পারেন না। নিজের পক্ষে যদি তাহার কিছু বলিবার থাকে তবে আগামী রবিবারের পূর্বে সে সম্বন্ধে কমিটির ՓԻՑՑ