পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

QQWり রবীন্দ্র-রচনাবলী পূর্ব-ইতিহাস লইয়াও কোনো আপত্তি প্রকাশ করিবে না— হরিমোহিনী বিশেষ কৌশলে এই-সমস্ত সমাধান করিয়া দিয়াছেন— এমন সময়, শুনিলে লোকে আশ্চর্য হইবে, স্বচরিত একেবারে বাকিয়া দাড়াইয়াছে। কী তাহার মনের ভাব তিনি জানেন না ; কেহ তাহাকে কিছু বুঝাইয়াছে কি না, আর-কারও দিকে তাহার মন পড়িয়াছে কি না, তাহা ভগবান জানেন — “কিন্তু বাপু, তোমাকে আমি খুলেই বলি, ও মেয়ে তোমার যোগ্য নয়। পাড়াগায়ে ওর বিয়ে হলে ওর কথা কেউ জানতেই পারবে না ; সে এক রকম করে চলে যাবে । কিন্তু তোমরা শহরে থাক, ওকে যদি বিয়ে কর তা হলে শহরের লোকের কাছে মুখ দেখাতে পারবে না ।” গোরা ক্রুদ্ধ হইয়া উঠিয়া কহিল, "আপনি এ-সব কথা কী বলছেন ! কে আপনাকে বলেছে যে, আমি তাকে বিবাহ করবার জন্যে তার সঙ্গে বোঝাপড়া করতে গেছি!” হরিমোহিনী কহিলেন, “আমি কী করে জানব বাবা ! কাগজে বেরিয়ে গেছে সেই শুনেই তো লজ্জায় মরছি।” | গোরা বুঝিল, হারানবাবু অথবা তাহার দলের কেহ এই কথা লইয়া কাগজে আলোচনা করিয়াছে। গোরা মুষ্ট বদ্ধ করিয়া কহিল, “মিথ্য কথা !" হরিমোহিনী তাহার গর্জনশব্দে চমকিয়া উঠিয়া কহিলেন, “আমিও তো তাই জানি। এখন আমার একটি অনুরোধ তোমাকে রাখতেই হবে। একবার তুমি রাধারানীর কাছে চলো ।” গোরা জিজ্ঞাসা করিল, “কেন ?” হরিমোহিনী কহিলেন, “তুমি তাকে একবার বুঝিয়ে বলবে ।” গোরার মন এই উপলক্ষ্যটি অবলম্বন করিয়া তখনই স্বচরিতার কাছে যাইবার জন্ত উদ্যত হইল। তাহার হৃদয় বলিল, ‘আজ একবার শেষ দেখা দেখিয়া আসিবে চলো। কাল তোমার প্রায়শ্চিত্ত— তাহার পর হইতেই তুমি তপস্বী । আজ কেবল এই রাত্রিটুকুমাত্র সময় আছে— ইহারই মধ্যে কেবল অতি অল্পক্ষণের জন্য । তাহাতে কোনো অপরাধ হইবে না । যদি হয় তো কাল সমস্ত ভস্ম হইয়া যাইবে ।’ গোরা একটু চুপ করিয়া থাকিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “তঁাকে কী বোঝাতে হবে বলুন।” আর কিছু নয়— হিন্দু আদৰ্শ-অনুসারে স্বচরিতার মতো বয়স্থ কন্যার অবিলম্বে বিবাহ করা কর্তব্য এবং হিন্দুসমাজে কৈলাসের মতো সংপত্ৰিলাভ স্বচরিতার অবস্থার