পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী هو 4) বল আমাকে জড়াবেন না । এর মানেটা কী ? আসল কথা, ইচ্ছেটা তোমার নয় যে ওর মন পরিষ্কার হয়ে যায় ।” অন্ত কোনো সময় হইলে গোরা আগুন হইয়া উঠিত। এমনতরো সত্য অপবাদও সে সহ করিতে পারিত না । কিন্তু আজ তাহার প্রায়শ্চিত্ত আরম্ভ হইয়াছে ; সে রাগ করিল না । সে মনের মধ্যে তলাইয়া দেখিল হরিমোহিনী সত্য কথাই বলিতেছেন । সে স্বচরিতার সঙ্গে বড়ো বাধনটা কাটিয়া ফেলিবার জন্য নির্মম হইয়া উঠিয়াছে ; কিন্তু একটি সূক্ষ্ম স্বত্র, যেন দেখিতে পায় নাই এমনি ছল করিয়া সে রাখিতে চায়। সে স্বচরিতার সহিত সম্বন্ধকে একেবারে সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করিয়া দিতে এখনও পারে নাই । কিন্তু কৃপণতা ঘুচাইতে হইবে। এক হাত দিয়া দান করিয়া আর-এক হাত দিয়া ধরিয়া রাখিলে চলিবে না । সে তখন কাগজ বাহির করিয়া বেশ জোরের সঙ্গে বড়ো অক্ষরে লিখিল— ‘বিবাহই নারীর জীবনে সাধনার পথ, গৃহধর্মই তাহার প্রধান ধর্ম। এই বিবাহ ইচ্ছাপূরণের জন্য নহে, কলাণসাধনের জন্য । সংসার স্বথেরই হউক আর দুঃখেরক্ট হউক, একমনে সেই সংসারকেত বরণ করিয়া, সতী সাধ্বী পবিত্র হইয়া, ধর্মকেই রমণী গৃহের মধ্যে মূর্তিমান করিয়া রাখিবেন এই তাহদের ব্রত ' হরিমোহিনী কহিলেন, “অমনি আমাদের কৈলাসের কথাটা একটুখানি লিখে দিলে ভালো করতে বাবা ” গোরা কহিল, "না, আমি তাকে জানি নে । তার কথা লিখতে পারব না ।” হরিমোহিনী কাগজখানি যত্ন করিয়া মুড়িয়া আঁচলে বাপিয়া বাড়ি ফিরিয়া আসিলেন । স্বচরিতা তখনো আনন্দময়ীর নিকট ললিতার বাড়িতে ছিল । সেখানে আলোচনার সুবিধা হইবে না এবং ললিতা ও অনিন্দময়ীর নিকট হইতে বিরুদ্ধ কথা শুনিয়া তাহার মনে দ্বিধা জন্মিতে পারে আশঙ্কা করিয়া, সুচরিতাকে বলিয়া পঠাইলেন, পরদিন মধ্যাহ্নে সে যেন তাহার নিকটে অসিয়া আহার করে । বিশেষ প্রয়োজনীয় কথা আছে, আবার অপরান্ডুেই সে চলিয়া যাক্টতে পfরে। পরদিন মধ্যাহ্নে স্বচরিতা মনকে কঠিন করিয়াই আসিল । সে জানিত তাহার মাসি তাহাকে এই বিবাহের কথাই আবার আর কোনোরকম করিয়া বলিবেন । লে আজ র্তাহীকে অত্যন্ত শক্ত জবাব দিয়া কথাটা একেবারেই শেষ করিয়া দিবে এই