পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা (t(tఏ উৎসর্গ করে দিয়ে তবেই আমি সম্পূর্ণ পবিত্ররূপে নিঃস্ব হতে পারব— তবেই আমি ব্রাহ্মণ হব ।” গোর হরিমোহিনীর সম্মুখে আসিতেই তিনি বলিয়া উঠিলেন, “বাবা, একবার তুমি আমার সঙ্গে চলো । তুমি গেলে, তুমি মুখের একটি কথা বললেই সব হয়ে যাবে ” গোরা কহিল, “আমি কেন যাব । তার সঙ্গে আমার কী যোগ ! কিছুই না ।” হরিমোহিনী কহিলেন, “লে যে তোমাকে দেবতার মতো ভক্তি করে— তোমাকে গুরু বলে মানে ৷” গোরার হৃৎপিণ্ডের এক দিক হইতে আর-এক দিকে বিদ্যুৎতপ্ত বজ্ৰস্থচী বিধিরা গেল । গোরা করিল, “আমার যাবার প্রয়োজন দেখি নে । তার সঙ্গে আমার দেখা হবার আর-কোনো সম্ভাবনা নেই ।” হরিমোহিনী খুশি হইয়া কহিলেন, “সে তো বটেই । অতবড়ো মেয়ের সঙ্গে দেখাসাক্ষাং হওয়াটা তো ভালো নয় । কিন্তু, বাবা, আজকের আমার এই কাজটি না করে দিয়ে তো তুমি ছাড়া পাবে না । তার পরে আর কখনো যদি তোমাকে ডাকি তখন বোলো ।” গোরা বারবার করিয়া মাথা নাড়িল । আর না, কিছুতে না । শেষ হইয়া গেছে। তাহার বিধাতাকে নিবেদন করা হইয়া গেছে । তাহার শুচিতায় এখন সে আর কোনো চিহ্ন ফেলিতে পরিবে না । সে দেথা করিতে যাইবে না । হরিমোহিনী যখন গোরার ভাবে বুঝিলেন তাহাকে টলানো সম্ভব হইবে না তখন তিনি কহিলেন, "নিতান্তই যদি না যেতে পার তবে এক কাজ করে বাবা, একটা চিঠি তাকে লিখে দাও।” গোরা মাথা নাড়িল । সে হইতেই পারে না । চিঠিপত্র নয় । হরিমোহিনী কহিলেন, “আচ্ছা, তুমি আমাকেই দু-লাইন লিখে দাও । তুমি সব শাস্ত্রই জান, আমি তোমার কাছে বিধান নিতে এসেছি।” গোরা জিজ্ঞাসা করিল, “কিসের বিধান ?” হরিমোহিনী কহিলেন, "হিন্দুঘরের মেয়ের উপযুক্ত বয়সে বিবাহ করে গৃহধর্ম পালন করাই সকলের চেয়ে বড়ো ধর্ম কি না ।” গোর কিছুক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া কহিল, “দেখুন, আপনি এ সমস্ত ব্যাপারে আমাকে জড়াবেন না । বিধান দেবার পণ্ডিত আমি নই।” হরিমোহিনী তখন একটু তীব্রভাবে কহিলেন, “তোমার মনের ভিতরকার ইচ্ছাটা তা হলে খুলেই বলো-না। গোড়াতে ফাস জড়িয়েছ তুমিই, এখন খোলবার বেলায়