পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী سنوا\?6 তাহার কোনো সম্বন্ধ নাই ইহা স্মরণ করিয়া সে আরাম পাইল । মহিমের হঠাৎ আপিস কামাই করিবার কোনো উপায় ছিল না । তিনি ডাক্তার প্রভৃতির সমস্ত বন্দোবস্ত করিয়া দিয়া একবার কেবল সাহেবকে বলিয়া ছুটি লইতে গিয়াছিলেন । গোরা যেই বাড়ির বাহির হইতেছে এমন সময় মহিম আসিয়া উপস্থিত হইলেন ; কহিলেন, “গোরা, যাচ্ছ কোথায় ?” গোরা কহিল, “ভালো খবর । ডাক্তার এসেছিল। বললে কোনো ভয় নেই ।” মহিম অত্যন্ত আরাম পাইয়া কহিলেন, “বাচালে। পরশু একটা দিন আছে— শশিমুখীর বিয়ে আমি সেইদিনই দিয়ে দেব। গোরা, তোমাকে কিন্তু একটু উদযোগী হতে হবে । আর দেখো, বিনয়কে কিন্তু আগে থাকতে সাবধান করে দিয়ো— সে যেন সেদিন না এসে পড়ে । অবিনাশ ভারি হিন্দু-– সে বিশেষ করে বলে দিয়েছে তার বিয়েতে যেন ওরকম লোক না আসতে পায় আর-একটি কথা তোমাকে বলে রাখি ভাই, সেদিন আমার আপিসের বড়ো সাহেবদের নিমন্ত্রণ করে আনব, তুমি যেন তাদের তেড়ে মারতে যেয়ো না । আর কিছু নয়, কেবল একটুখানি ঘাড়টা নেড়ে ‘গুড, ঈভনিং স্তর' বললে তোমাদের হিদু শাস্ত্র অসিদ্ধ হয়ে যাবে না— বরঞ্চ পণ্ডিতদের কাছে বিধান নিয়ো । বুঝেছ ভাই, ওরা রাজার জাত, ওখানে তোমার অহংকার একটু থাটো করলে তাতে অপমান হবে না।” মহিমের কথার কোনো উত্তর না করিয়া গোরা চলিয়া গেল । ԳԾ সুচরিতা যখন চোখের জল লুকাইবার জন্য তোরঙ্গের পরে ঝুকিয়া পড়িয়া কাপড় সাজাইতে ব্যস্ত ছিল এমন সময় খবর আসিল, গৌরমোহনবাবু আসিয়াছেন । কুচরিত তাড়াতাড়ি চোখ মুছিয়া তাহার কাজ ফেলিয়া উঠিয়া পড়িল । এবং তখনই গোরা ঘরের মধ্যে আসিয়া প্রবেশ করিল। গোরার কপালে তিলক তখনো রহিয়া গেছে, সে সম্বন্ধে তাহার খেয়ালই ছিল না । গায়েও তাহার তেমনি পট্টবস্ত্র পরা। এমন বেশে সচরাচর কেহ কাহারও বাড়িতে দেখা করিতে আসে না । সেই প্রথম গোরার সঙ্গে যেদিন দেখা হইয়াছিল সেই দিনের কথা স্বচরিতার মনে পড়িয়া গেল । স্বচরিতা জানিত, সেদিন গোরা বিশেষ করিয়া যুদ্ধের বেশে আসিয়াছিল— আজও কি এই যুদ্ধের সাজ ! গোরা আলিয়াই একেবারে মাটিতে মাথা ঠেকাইয়া পরেশকে প্রণাম করিল এবং