পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা (tఆS তাহার পায়ের ধুলা লইল । পরেশ ব্যস্ত হইয়া তাহাকে তুলিয়া ধরিয়া কছিলেন, “এস, এস বাবা, বোলো ।” গোরা বলিয়া উঠিল, “পরেশবাবু, আমার কোনো বন্ধন নেই।” পরেশবাবু আশ্চর্ষ হইয়া কহিলেন, “কিসের বন্ধন ?” গোরা কহিল, “আমি হিন্দু নই।” পরেশবাবু কছিলেন, “হিন্দু নও!” গোরা কহিল, “না, আমি হিন্দু নই। আজ খবর পেয়েছি আমি মিউটিনির সময়কার কুড়োনো ছেলে, আমার বাপ আইরিশ ম্যান। ভারতবর্ষের উত্তর থেকে দক্ষিণ পর্যন্ত সমস্ত দেবমন্দিরের দ্বার আজ আমার কাছে রুদ্ধ হয়ে গেছে, আজ সমস্ত দেশের মধ্যে কোনো পর্ভূক্তিতে কোনো জায়গায় আমার আহারের আসন নেই ।” পরেশ ও স্বচরিতা স্তম্ভিত হইয়া বসিয়া রছিলেন । পরেশ তাহাকে কী বলিবেন ভাবিয়া পাইলেন না । গোরা কহিল, “আমি আজ মুক্ত পরেশবাবু! আমি যে পতিত হব, ব্রাত্য হব, সে ভয় আর আমার নেই– আমাকে আর পদে পদে মাটির দিকে চেয়ে শুচিতা বঁচিয়ে চলতে হবে না ।” স্বচরিতা গোরার প্রদীপ্ত মুখের দিকে একদৃষ্টিতে চাহিয়া রহিল। গোরা কহিল, “পরেশবাবু, এতদিন আমি ভারতবর্ধকে পাবার জন্তে সমস্ত প্রাণ দিয়ে সাধনা করেছি— একটা-না একটা জায়গায় বেধেছে— সেই-সব বাধার সঙ্গে আমার শ্রদ্ধার মিল করবার জন্ত আমি সমস্ত জীবন দিন-রাত কেবলই চেষ্টা করে এসেছি— এই শ্রদ্ধার ভিত্তিকেই খুব পাকা করে তোলবার চেষ্টায় আমি আর-কোনো কাজই করতে পারি নি— সেই আমার একটিমাত্র সাধনা ছিল । সেইজন্যেই বাস্তব ভারতবর্ষের প্রতি সত্যদৃষ্টি মেলে তার সেবা করতে গিয়ে আমি বার বার ভরে ফিরে এসেছি— আমি একটি নিষ্কণ্টক নির্বিকার ভাবের ভারতবর্ষ গড়ে তুলে সেই অভেদ্য দুর্গের মধ্যে আমার ভক্তিকে সম্পূর্ণ নিরাপদে রক্ষা করবার জন্যে এতদিন আমার চারি দিকের সঙ্গে কী লড়াই না করেছি! আজি এক মুহূর্তেই আমার সেই ভাবের দুর্গ স্বপ্নের মতো উড়ে গেছে। আমি একেবারে ছাড়া পেয়ে হঠাৎ একটা বৃহৎ সত্যের মধ্যে এসে পড়েছি । সমস্ত ভারতবর্ষের ভালোমন্দ স্থখদু:খ জ্ঞান-অজ্ঞান একেবারেই আমার বুকের কাছে এসে পৌচেছে— আজি আমি সত্যকার সেবার অধিকারী হয়েছি– সত্যকার কর্মক্ষেত্র আমার সামনে এসে পড়েছে— লে আমার মনের