পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(2b" রবীন্দ্র-রচনাবলী ও পারেতে দুটি মেয়ে নাইতে নেবেছে । ঝুম্ ঝুমু চুলগাছটি ঝাড়তে নেগেছে। কে রেখেছে, কে রেখেছে, দাদা রেখেছে । আজ দাদার ঢেলা ফেলা, কাল দাদার বে। দাদা যাবে কোন খান দে, বকুলতলা দে । বকুলফুল কুড়তে কুড়তে পেয়ে গেলুম মালা । রামধন্থকে বাদি বাজে, সীতেনাথের খেলা ৷ সীতেনাথ বলে রে ভাই, চলকড়াই খাব ৷ চালকড়াই খেতে খেতে গলা হল কাঠ । হেথা হোথা জল পাব চিৎপুরের মাঠ । চিংপুরের মাঠেতে বালি চিক্‌ চিক্‌ করে । সোনা-মুখে রোদ নেগে রক্ত ফেটে পড়ে । ইহার মধ্যে কোনো ছবিই আমাদিগকে ধরিয়া রাখে না, আমরাও কোনে ছবিকে ধরিয়া রাখিতে পারি না । বোটনবিশিষ্ট নোটন পায়রাগুলি, বড়ো সাহেবের বিবিগণ, দুই পারে ভাসমান দুই রুই কাংলা, পরপারে স্নাননিরত দুই মেয়ে, দাদার বিবাহ, রামধনুকের বাদ্যসহকারে সীতানাথের খেলা এবং মধ্যাহ্নরৌদ্রে তপ্তবালুচিকুণ মাঠের মধ্যে খরতাপক্লিষ্ট রক্তমুখচ্ছবি— এ সমস্তই স্বপ্নের মতো । ও পারে যে দুইটি মেয়ে নাহিতে বসিয়াছে এবং দুই হাতের চুড়িতে চুড়িতে ঝুন ঝুন শব্দ করিয়া চুল ঝাড়িতেছে তাহারা ছবির হিসাবে প্রত্যক্ষ সত্য, কিন্তু প্রাসঙ্গিকতা হিসাবে অপরূপ স্বপ্ন । এ কথাও পাঠকদের স্মরণে রাখা কর্তব্য যে, স্বপ্ন রচনা করা বড়ো কঠিন । হঠাৎ মনে হইতে পারে যে, যেমন-তেমন করিয়া লিখিলেই ছড়া লেখা যাইতে পারে । কিন্তু সেই যেমন-তেমন ভাবটি পাওয়া সহজ নহে । সংসারের সকল কার্যেই আমাদের এমনি অভ্যাস হইয়া গেছে যে, সহজ ভাবের অপেক্ষ সচেষ্ট ভাবটাই আমাদের পক্ষে সহজ হইয়া দাড়াইয়াছে। না ডাকিলেও ব্যস্তবাগীশ চেষ্টা সকল কাজের মধ্যে আপনি আসিয়া হাজির হয় । এবং সে যেখানেই হস্তক্ষেপ করে সেইখানেই ভাব আপন লঘু মেঘাকার ত্যাগ করিয়া দানা বাধিয়া উঠে, তাহার আর বাতাসে উড়িবার ক্ষমতা থাকে না। এইজন্য ছড়া জিনিসটা যাহার পক্ষে সহজ তাহার পক্ষে নিরতিশয় সহজ, কিন্তু যাহার পক্ষে কিছুমাত্র কঠিন তাহার পক্ষে একেবারেই অসাধ্য। যাহা সর্বাপেক্ষ সরল তাহ সর্বাপেক্ষা কঠিন, সহজের প্রধান লক্ষণই এই ৷