পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

☾Ꮡ রবীন্দ্র-রচনাবলী মা ! যে ভাবনা শেষ হয় না এমন ভাবনার দরকার কী বাপ ! ভাবনা তো তোর চিরকাল থাকবে, ভাত যে শুকোয় । লক্ষ্মী আমার, একবার ওঠ । নরহরি । ( চমকিয়া ) কী বললে মা ? লক্ষ্মী ? কী আশ্চর্য ! এক কালে লক্ষ্মী বলতে দেবী-বিশেষকে বোঝাত। পরে লক্ষ্মীর গুণ অনুসারে স্বশীল স্ত্রীলোককে লক্ষ্মী বলত, কালক্রমে দেখো পুরুষের প্রতিও লক্ষ্মী শব্দের প্রয়োগ হচ্ছে । একবার ভেবে দেখো মা, আস্তে আস্তে ভাষার কেমন পরিবর্তন হয় । ভাবলে আশ্চর্য হতে হবে । ভাবনায় দ্বিতীয় ডুব মা ! আমার আর কি কোনো ভাবনা নেই নক্ল ? আচ্ছা, তুই তো এত ভাবিস তুইই বল দেখি, উপস্থিত কাজ উপস্থিত ভাবনা ছেড়ে কি এই-সব বাজে ভাবনা নিয়ে থাকা ভালো ? সকল ভাবনারই তো সময় আছে । নরহরি । এ কথাটা বড়ে গুরুতর মা ! আমি হঠাৎ এর উত্তর দিতে পারব না । এটা কিছুদিন ভাবতে হবে, ভেবে পরে বলব । মা ! আমি যে কথাই বলি তোর ভাবনা তাতে কেবল বেড়েই ওঠে, কিছুতেই আর কমে না। কাজ নেই বাপু, আমি আর কাউকে পাঠিয়ে দিই । [ প্রস্থান মাসিম মাসিমা । ছিনরু, তুই কি পাগল হলি ? ছেড়া চাদর, একমুখ দাড়ি– সমুখে ভাত নিয়ে ভাবনা ! সুবলের মা তোকে দেখে ঠেসেই কুরুক্ষেত্ৰ ! নরহরি। কুরুক্ষেত্ৰ ! আমাদের আর্যগৌরবের শ্মশানক্ষেত্র । মনে পড়লে কি শরীর লোমাঞ্চিত হয় না। অন্ত:করণ অধীর হয়ে ওঠে না! আচা, কত কথা মনে পড়ে ! কত ভাবনাই জেগে ওঠে ! বল কী মাসি ! তেসেই কুরুক্ষেত্র । তার চেয়ে বল না কেন কেঁদেই কুরুক্ষেত্ৰ ! অশ্রুনিপাত মাসিমা । ওমা, এ যে কঁদিতে বসল ! আমাদের কথা শুনলেক্ট এর শোক উপস্থিত হয়। কাজ নেই বাপু ! [ প্রস্থান দিদিম! দিদিমা ! ও নরু, সুর্য যে অস্ত যায় ! নরহরি। ছি দিদিমা, স্বর্য তো অস্ত যায় না। পৃথিবীই উলটে যায়। রোসো, আমি তোমাকে বুঝিয়ে দিচ্ছি। (চারিদিকে চাহিয়া ) একটা গোল জিনিস কোথাও নেই ? দিদিমা । এই তোমার মাথা আছে— মুণ্ডু আছে ।