পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হাস্তকৌতুক 43 নরহরি । কিন্তু মাথা যে বদ্ধ, মাথা যে ঘোরে না । দিদিমা ! তোমারই ঘোরে না, তোমার রকম দেখে পাড়ামুদ্ধ লোকের মাথা ঘুরছে! নাও, আর তোমায় বোঝাতে হবে না, এ দিকে ভাত জুড়িয়ে গেল, মাছি ভন ভন করছে । নরহরি। ছি দিদিমা, এটা যে তুমি উলটো কথা বললে ! মাছি তো ভন ভন করে না । মাছির ডানা থেকেই এই রকম শব্দ হয় । রোসো, আমি তোমাকে প্রমাণ করে দিচ্ছি— দিদিম । কাজ নেই তোমার প্রমাণ করে। [ প্রস্থান विडौश मृथ) নরহরি চিন্তামগ্ন । ভাবনা ভাঙাইবার উদ্দেশে নরহরির শিশু ভাগিনেয়কে কোলে করিয়া মাতার প্রবেশ মা ! ( শিশুর প্রতি ) জাদু, তোমার মামাকে দণ্ডবং করে । নরহরি । ছি মা, ওকে ভূল শিখিয়ো না । একট ভেবে দেখলেই বুঝতে পারবে, ব্যাকরণ-অনুসারে দণ্ডবং করা হতেই পারে না— দণ্ডবং হওয়া বলে । কেন বুঝতে পেরেছ মা ? কেননা দণ্ডবং মানে— মা ! না বাবা, আমাকে পরে বুঝিয়ে দিলেই হবে । তোমার ভাগনেকে এখন একটু আদর করে । নরহরি। আদর করব ? আচ্ছা, এস আদর করি। ( শিশুকে কোলে লইয়া) কী করে আদর আরম্ভ করি ? রোসো, একটু ভাবি । চিন্তামগ্ন মা । আদর করবি, তাতেও ভাবতে হবে নরু ? নরহরি। ভাবতে হবে না মা ? বল কী ! ছেলেবেলাকার আদরের উপরে ছেলের সমস্ত ভবিষ্যৎ নির্ভর করে তা কি জান ? ছেলেবেলাকার এক-একটা সামান্ত ঘটনার ছায়া বৃহৎ আকার ধরে আমাদের সমস্ত যৌবনকালকে, আমাদের সমস্ত জীবনকে আচ্ছন্ন করে রাখে এটা যখন ভেবে দেখা যায়— তখন কি ছেলেকে আদর করা একটা সামান্য কাজ বলে মনে করা যায় ? এইটে একবার ভেবে দেখো দেখি মা ! মা ! থাক বাবা, সে কথা আর-একটু পরে ভাবৰ, এখন তোমার ভাগনেটির সঙ্গে দুটো কথা কও দেখি ।