পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ν8 Ο लीग-स5मादकी রমেন। কী করছ বউদি, শান্ত হও, তোমার শরীর যে যাবে ভেঙে। নীরজা। এই ভাঙা শরীরই তো আমার কপাল ভেঙেছে। ওর জন্যে মমতা কিসের? তার ’পরে আমার অবিশ্বাস এ দেখা দিল কোথা থেকে? এ যে অক্ষম জীবন নিয়ে আমার নিজেরই উপরে অবিশ্বাস। সেই তার নীরু আজ আছে কোথায়, যাকে তিনি কখনো বলতেন ‘বনলক্ষ্মী’। আজ কে নিলে কেড়ে তার উপবন ? আমার কি একটা নাম ছিল? কাজ সেরে আসতে যেদিন তীর দেরি হত আমি বসে থাকতুম তীর খাবার আগলে, তখন আমাকে ডেকেছেন ‘অন্নপূর্ণ”। সন্ধ্যাবেলায় তিনি বসতেন দিঘির ঘাটে, ছোটাে রুপোর থালায় বেলফুল রাশ করে তার উপরে পান সাজিয়ে দিতাম তাকে, হেসে আমাকে বলতেন, তাম্বুলকরাঙ্কবাহিনী’। সেদিন সংসারের সব পরামর্শই আমার কাছ থেকে নিয়েছেন তিনি। আমাকে নাম দিয়েছিলেন, “গৃহসচিব' কখনো-বা ‘হােম সেক্রেটারি’। আমি যেন সমুদ্রে এসেছিলেম ভরা নদী, ছড়িয়েছিলেম নানা শাখা নানা দিকে। সব শাখাতেই আজ একাদণ্ডে জল গেল শুকিয়ে, বেরিয়ে পড়ল পাথর। রমেন। বউদি, আবার তুমি সেরে উঠবে- তোমার আসন আবার অধিকার করবে। পূৰ্ণ শক্তি দিয়ে। নীরজা। মিছে। আশা দিয়ে না ঠাকুরপো। ডাক্তার কী বলে সে আমার কানে আসে। সেইজন্যেই এতদিনের সুখের সংসারকে এত করে আঁকড়ে ধরছে আমার এই কাঙালি নৈরাশ্য। রমেন। দরকার কী বাউদি ? আপনাকে এতদিন তো ঢেলে দিয়েছ তোমার সংসারে। তার চেয়ে বড়ো কথা আর কিছু আছে কি? যেমন দিয়েছ তেমনি পেয়েছ, এত পাওয়াই বা কোন মেয়ে পায় ? যদি ডাক্তারের কথা সত্যি হয়, যদি যাবার দিন এসেই থাকে, তা হলে যাকে বড়ো করে পেয়েছ তাকে বড়ো করে ছেড়ে দাও । এতদিন যে-গৌরবে কাটিয়েছ সে গৌরবকে খাটো করে দিয়ে যাবে কেন? এ বাড়িতে তোমার শেষ স্মৃতিকে যাবার সময় নূতন মহিমা দিয়ে। নীরজা। বুক ফেটে যায় ঠাকুরপো, বুক ফেটে যায়! আমার এতদিনের আনন্দকে পিছনে ফেলে রেখে হাসিমুখে চলে যেতে পারতুম। কিন্তু কোনোখানে কি এতটুকু ফাক থাকবে না যেখানে আমার জন্যে একটা বিরহের দীপ টিমটিম করেও জ্বলবে? এ কথা ভাবতে গেলে যে মরতেও ইচ্ছে করে না। ঐ সরলা সমস্তটাই দখল করবে। একেবারে পুরোপুরি, বিধাতার এই কি বিচার ? ? রমেন। সত্যি কথা বলব, বউদি, রাগ কোরো না। তোমার কথা ভালো বুঝতেই পারি নে। যা নিজে ভোগ করতে পারবে না, তাও প্ৰসন্ন্যমনে দান করতে পারো না যাকে এতদিন এত দিয়েছ? তোমার ভালোবাসার উপর এত বড়ো খোটা থেকে যাবে? তোমার সংসারে তোমারই শ্রদ্ধার প্ৰদীপ তুমি আপনিই আজ চুরমার করতে বসেছ তার ব্যথা তুমি চলে যাবে এড়িয়ে, কিন্তু চিরদিন সে আমাদের বাজবে যে। মিনতি করে বলছি, তোমার সারা জীবনের দাক্ষিণ্যকে শেষ মুহূর্তে কৃপণ করে যেয়ে না। কুঁপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠল। নীরজা। চুপ করে বসে রইল রমেন, সাত্মা দেবার চেষ্টা মাত্র করলে না। কায়ার বেগ থেমে গেলে নীরজা বিছানায় উঠে বসল। নীরজা। আমার একটি ভিক্ষা আছে ঠাকুরপো। রমেন। হুকুম করো বউদি। নীরজা। বলি শোলে। যখন চোখের জলে ভিতরে ভিতরে বুক ভেসে যায়। তখন ঐ পরমহংসদেবের ছবির দিকে, ৩ কি-য়ে পার্কি ! কি স্তু ওর বাণী তো হৃদয়ে পৌছয় না। আমার মন