পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8SO রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী করা যেতে পারত যে, কানের এক ‘সোনায়।” যদি মূর্ধন্য ণ লাগল, তবে অন্য ‘শোনায়’ কেন দম্ভ ন লাগে। শ্রবণ” শব্দের র-ফলা লোপ হবার সঙ্গে সঙ্গে তার মূর্ধন্য ণ সংস্কৃত ব্যাকরণ মতেই দন্ত ন হয়েছে। অথচ ‘স্বর্ণ” শব্দ যখন রেফ বর্জন করে ‘সোনা" হল, তখন মূর্ধন্য ণ-য়ের বিধান কোন মতে হয় ? হাল আমলের নতুন সংস্কৃত-পোড়েরা ‘সোনা’কে শোধন করে নিয়েছেন, তাদের স্বাকল্পিত ব্যাকরণবিধির দ্বারা,-- এখন দখল প্রমাণ ছাড়া স্বত্বের অন্য প্রমাণ আগ্রাহ্য হয়ে গেল। ‘শ্রবণ” শব্দের অপভ্ৰংশ শোনা শব্দ যখন বাংলা ভাষায় বানান-দেহ ধারণ করেছিল, তখন বিদ্যাসাগর প্রভৃতি প্রাচীন পণ্ডিতেরা বিধানকর্তা ছিলেন- সেদিনকার বানানে কান সোনা প্রভৃতিরও মূর্ধন্যত্ব প্রাপ্তি হয় নি। কৃষ্ণ শব্দজাত কানাই শব্দে আজও দন্ত ন চলছে, বর্ণ (বর্ণ যোজন) শব্দজাত বানান শব্দে আজও মূর্ধনা ণ-এর প্রবেশ ঘটে নি তাতে কি পাণ্ডিত্যের খর্বতা घाptछ? কিছুকাল পূর্বে যখন ভারতশাসনকর্তারা ইন্টারনা শুরু করলেন, তখন খবরের কাগজে তাড়াতাড়ি একটা শব্দ সৃষ্টি হয়ে গেল— ‘অন্তরীণ”। শব্দসাদৃশ্য ছাড়া এর মধ্যে আর কোনো যুক্তি নেই। বিশেষণে ওটা কী হতে পারে, তাও কেউ ভাবলেন না। Externmentাকে কি বলতে হবে "বহিরণ? অথচ অন্তরায়ণ, অন্তরায়িত, বহিরায়ণ, বহিরায়িত ব্যবহার করলে আপত্তির কারণ থাকে না, সকল দিকে সুবিধাও ঘটে। নূতন সংঘটিত শব্দের মধ্যে কদৰ্যতায় শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করেছে। 'বাধ্যতামূলক শিক্ষা’। প্রথমত শিক্ষার মূলের দিকে বাধ্যতা নয়, ওটা শিক্ষার পিঠের দিকে। বিদ্যাদান বা বিদ্যালােভই হচ্ছে শিক্ষার মূলে— তার প্রণালীতেই কম্পালশন’। অথচ অবশ্য-শিক্ষা’ শব্দটা বলাবামাত্র বোঝা যায় জিনিসটা কী। দেশে অবশ্য-শিক্ষা প্রবর্তন করা উচিত—কানেও শোনায় ভালো, মনেও প্রবেশ করে সহজে। কম্পালসারি এডুকেশনের বাংলা যদি হয় বাধ্যতামূলক শিক্ষা’, ‘কম্পালসারি সাবজেক্ট’ কি হবে বাধ্যতামূলক পাঠ্য বিষয়’ ? তার চেয়ে অবশ্য-পাঠ্য বিষয়', কি সংগত ও সহজ শোনায় না? ঐচ্ছিক’ (optional ) শব্দটা সংস্কৃতে পেয়েছি, তারই বিপরীতে 'আবশ্যিক।’ শব্দ ব্যবহার চলে কি না, পণ্ডিতদের জিজ্ঞাসা করি। ইংরেজিতে যে-সব শব্দ অত্যন্ত সহজ ও নিত্য প্রচলিত, দরকারের সময় বাংলায় তার প্রতিশব্দ সহসা খুজে পাওয়া যায় না, তখন তাড়াতাড়ি যা হয় একটা বানিয়ে দিতে হয়। সেটা অনেক সময় বেখাপ হয়ে দাঁড়ায়, অনেক সময় মূল ভাবটা ব্যবহার করাই স্থগিত থাকে। অথচ সংস্কৃত ভাষায় হয়তো তার অবিকল বা অনুরূপ ভাবের শব্দ দুর্লভ নয়। একদিন রিপোর্ট' কথাটার বাংলা করবার প্রয়ােজন হয়েছিল। সেটাকে বানাবার চেষ্টা করা গেল, কোনােটাই মনে লািগল না। হঠাৎ মনে পড়ল কাদম্বরীতে আছে 'প্রতিবেদন’— আর ভাবনা রইল না। 'প্রতিবেদন, প্রতিবেদিত, প্রতিবেদক)- যেমন করেই ব্যবহার করো, কানো বা মনে কোথাও বাধে না। জনসংখ্যার অতিবৃদ্ধি ওভারপপুলেশন'- বিষয়টা আজকাল খবরের কাগজের একটা নিত্য আলোচ্য ; কোমর বেঁধে ওর একটা বাংলা শব্দ বানাতে গেলে হাঁপিয়ে উঠতে হয়- সংস্কৃত শব্দকোযে তৈরি পাওয়া যায়, “অতিপ্রজন”। বিদ্যালয়ের ছাত্র সম্বন্ধে 'রেসিডেন্ট, নন্‌রেসিডেন্ট’ বিভাগ করা দরকার, বাংলায় নাম দেৱ কী? সংস্কৃত ভাষায় সন্ধান করলে পাওয়া যায় 'আবাসিক', 'অনাবাসিক। সংস্কৃত শব্দভাণ্ডারে আমি কিছুদিন সন্ধানের, কাজ করেছিলেম। যা সংগ্রহ করতে পেরেছি, তা শ্ৰীযুক্ত সুনীতিকুমারের প্ররোচনায় প্রকাশ করবার জন্য তঁর হাতে অৰ্পণ করলুম। অন্তত এর অনেকগুলি শব্দ বাংলা BBBBBB BB0S0 DB BBBDB BDBHBB BSuS ' ' .. ' '