পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সংগীতচিন্তা ○ や> সেখানে স্থলের মধ্যে জলের অধিকারই যেন বেশি। কথকতা, যেটা অলংকারশাস্ত্ৰ-মতে ন্যারেটিভ শ্রেণী-ভুক্ত, তার কাঠামো গদ্যের হলেও স্ত্রীস্বাধীনতা-যুগের মেয়েদের মতোই গীতকলা তার মধ্যে অনায়াসেই অসংকোচে প্রবেশ করত। মনে তো পড়ে- একদিন তাতে মুগ্ধ হয়েছিলুম। সাহিত্যরচনার প্রচলিত পাশ্চাত্য বিধির কথা স্মরণ করে উদবোেল আনন্দকে লজ্জিত হয়ে সংযত Sf3 S C - যাই হােক, আমার বলবার কথা এই যে, আত্মপ্রকাশের জন্যে বাঙালি স্বভাবতই গানকে অত্যন্ত করে চেয়েছে। সেই কারণে সর্বসাধারণে হিন্দুস্থানী সংগীতরীতির একান্ত আনুগত হতে পারে নি। সেইজন্যেই কানাড়া আড়ােনা মালকোষ দরবারী তোড়ির বহুমূল্য গীতোপকরণ থাকা সত্ত্বেও বাঙালিকে কীর্তন সৃষ্টি করতে হয়েছে। গানকে ভালোবেসেছে বলেই সে গানকে আদর করে আপনি হাতে আপন মনের সঙ্গে মিলিয়ে তৈরি করতে চেয়েছে। তাই, আজ হোক কাল হোক, বাংলায় গান যে উৎকর্ষ লাভ করবে। সে তার আপনি রাস্তাতেই করবে, আর-কারো পাথরজমানো বাধা রাস্তায় করবে না। যে সূত্রে এই প্ৰবন্ধ রচনা শুরু করেছিলেম সেই সূত্রটি এইখানে আর-একবার ধরা যাক। দেশের সংস্কৃতিতে সংগীতের প্রাধান্য ছিল, আমাদের বিদায়োম্মুখ পূর্বযুগের দিকে তাকিয়ে সেই কথাটি জানিয়েছি। তার পরে বয়স যতই বাড়তে লাগল ততই অন্য-এক যুগের মধ্যে প্রবেশ করতে লাগলুম, যে যুগে ছেলেরা প্রথম বয়স থেকে কলেজের উচ্চ ডিগ্রির দিকে মাথা উঁচু করে নোট মুখস্থ করতে লেগেছে। তখন গানটাকে সম্মাননীয় বিদ্যা বলে গণ্য করবার ধারণা লুপ্ত হয়ে এল। যে-সব বড়ো ঘরে গাইয়েরা আদর ও আশ্রয় পেয়ে এসেছে সেখানে সংগীতের ভাঙাবাসায় পড়া-মুখস্থর গুঞ্জনধ্বনি মুখরিত হয়ে উঠল ; তখনকার যুবকদের এমন একটি শুচিবায়ুতে পেয়ে বসিল, যাতে দুৰ্গতিগ্রস্ত গান ব্যবসায়ীর চরিত্রের সঙ্গে জড়িত করে গান বিদ্যাটিরই পবিত্র রূপকে বীভৎস বলে কল্পনা করতে লাগল। বাংলা দেশের শিক্ষাবিভাগে সংগীতকে স্বীকার করতে পারে নি। তাই, সংগীতে রুচি অধিকার ও অভিজ্ঞতা না থাকাটাকে অশিক্ষার পরিচয় বলে কোনো লজ্জা বোধ করার কারণ তখনকার শিক্ষিতমণ্ডলীর মনে রইল না। বরঞ্চ সেদিন যে-সব ছেলে, হিতৈষীদের ভয়ে, চাপা গলায় গান গেয়েছে তাদের চরিত্রে হয়েছে সন্দেহ। অপর পক্ষে সেই সময়টাতে অনেক সৎকাজের সূচনা হয়েছে সে কথা মানতে হবে। তখন আমাদের পলিটিকস সাবধানে দুই কুল বাঁচিয়ে এ দিকে ও দিকে তাকিয়ে মাথা তুলছে, বক্তৃতামঞ্চে ইংরেজি বাণী হাততালি পাচ্ছে, খবরের কাগজের মুখ ফুটতে শুরু করেছে, সাহিত্যে দুই-একজন অগ্রণী পথে বেরিয়েছেন। কিন্তু, দেশে বড়ো বড়ো প্রাচীন সরোবর বুজে গিয়ে তার উপরে আজ যেমন চাষ চলছে, তেমনি তখন সংগীতের রসসঞ্চয় অন্তত শিক্ষিতপাড়ায় প্রায় মরে এসেছে। তার উপরে এগিয়ে চলেছে পাঠ্যপুস্তকের আবাদ। - আপন নীরসন্তাকে শুচিত বলে সম্মান দিয়েছিল যে যুগ, সে যে আজও অটল হয়ে আছে তা আমি বলি নে। বাঙালির প্রকৃতি আজ আবার আপনি গানের আসর খুঁজে বেড়াচ্ছে, সুরের উপাদান সংগ্রহ করতে সৃষ্টি করছে। দেশের বিদ্যােয়তন এই শুভ মুহুর্তে তার আনুকূল্য করবে9पाठ भ6न ४३ काधना कलेि। দৈবক্রমে যে সুযোগ আমি পেয়েছিলুম। সে কথা মনে পড়ছে। আমার ভাগ্যবিধাতাকে আমি নমস্কার করি। আমি যখন জন্ম নিয়েছি তখন আমাদের পরিবারের আশ্রয় জনতার বাইরে। সমাজে আমরা ব্রাত্য। আমাদের পরিবারে পরীক্ষা-পাসের সাধনা সেদিন গৌরব পায় নি। আমার দাদারা