পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ংগীতচিন্তা óbrዒ ‘খাতাখানা যখন কবি য়েটসের হাতে পড়ল তিনি একদিন রোদেনাস্টাইনের বাড়িতে অনেকগুলি ইংরেজি সাহিত্যিক ও সাহিত্যািরসজ্ঞকে তার থেকে কিছু আবৃত্তি করে শোনাবেন বলে নিমন্ত্রণ করেছিলেন। আমি মনের মধ্যে ভারি সংকুচিত হলেম। তার দুটি কারণ ছিল। নিতান্ত সাদাসিধে দশ-বারো লাইনের কবিতা শুনিয়ে, কোনোদিন আমি কোনো বাঙালি শ্রোতাকে যথেষ্ট তৃপ্তি পেতে দেখি নি। এমন-কি, অনেকেই আয়তনের খর্বতাকে কবিত্বের রিক্ততা ব'লেই স্থির করেন। একদিন আমার পাঠকেরা দুঃখ করে বলেছিলেন ইদানীং আমি কেবল গানই লিখছি। বলেছিলেন- আমার কাব্যকলায় কৃষ্ণপক্ষের আবির্ভাব, রচনা। তাই ক্ষয়ে ক্ষয়ে বচনের দিকে ছোটো হয়েই আসছে। * ' ‘তার পরে আমার ইংরেজি তর্জমাও আমি সসংকোচে কোনো-কোনো ইংরেজি-জােনা বাঙালি সাহিত্যিককে শুনিয়েছিলেম। তারা ধীর গভীর শান্ত ভাবে বলেছিলেন-মন্দ হয় নি, আর ইংরেজি যে অবিশুদ্ধ তাও নয়। সে সময়ে এনডারুজের সঙ্গে আমার আলাপ ছিল না। য়েটস সেদিনকার সভায় পাঁচ-সাতটি মাত্র কবিতা একটির পর আর-একটি শুনিয়ে পড়া শেষ করলেন। ইংরেজ শ্রোতারা নীরবে শুনলেন, নীরবে চলে গেলেন- দস্তুর-পালনের উপযুক্ত ধন্যবাদ পর্যন্ত আমাকে দিলেন না। সে রাত্রে নিতান্ত লজ্জিত হয়েই বাসায় ফিরে গেলেম। : 'পরের দিন চিঠি আসতে লাগল। দেশান্তরে যে খ্যাতি লাভ করেছি। তার অভাবনীয়তার বিস্ময় সেই দিনই সম্পূর্ণভাবে আমাকে অভিভূত করেছে। “যাই হোক, আমার বলবার কথাটা হচ্ছে এই যে, সেদিনকার আসরে যে ডালি উপস্থিত করা ৩ল ৩ার উপহারসামগ্রী আয়তনে যেমন অকিঞ্চিৎকর, উপাদানে তেমনি তার নিরলংকার বিরলতা। কিন্তু, সেইটুকুই রসজ্ঞদের আনন্দের পক্ষে এত অপর্যাপ্ত হয়েছিল যে, তার প্রত্যুত্তরে সাধুবাদের বিরলতা ছিল না। অলংকারাবাহুল্য শ্রোতার বা স্রষ্টার নিজের মনের জন্যে কিছু জায়গা "ছড়ে দেয় না। যার মন আছে তার পক্ষে সেটা ক্লেশকর। ; “কিন্তু অনেক মানুষ আছে যারা নিজের মনোহীন তার গহবর ভরাবার জন্যেই রসের ভোজে যায়, তারা বলে না যৎ স্বল্পং তিদিষ্টং'। তারা থিয়েটারে টিকিট কেনে শুধু নাটক শুনবে বলে নয়, বৃত্তির চারটি পর্যন্ত শুনবে বলে। তারা নিজেকে চিরকাল ফাঁকি দেয়, কেবলই সেরা জিনিসটির পদলৈ মোটা জিনিসটাকে বাছে। সাজাই করার চেয়ে বোঝাই করাটাতেই তাদের আনন্দ । এই কারণে তুমি যাকে সরলা বলছি সেটা তাদের পক্ষে রিক্ততা নয় তো কী? . কবি একটু থেমে বললেন, “তুমি যেমন নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলেছি, আমিও , তামনি বলব ! আমি গান রচনা করতে করতে, সে গান বার বার নিজের কানো শুনতে শুনতেই পুঝেছি যে, দরকার নেই 'প্রভূত কারু-কৌশলের। যথার্থ আনন্দ দেয় রূপের সম্পূর্ণতা— অতি সূক্ষ, অতি সহজ ভঙ্গিমার দ্বারাই সেই সম্পূর্ণতা জেগে ওঠে।” বললাম, ‘কথাগুলি আমার খুবই ভালো লাগল। এর মধ্যে দুই-একটি নতুন suggestion আমি পেলাম। সেগুলি ভেবে দেখব. তবুও আমার মনে হয় যে, সব ললিতকলার বিকাশধারাই : অ৩িমাত্রায় সরলতার দিকে হবে এমন কথা জোর করে বলা যায় না। কেননা, অনেক শ্রেষ্ঠ "শ্রণীর ললিত সৃষ্টি দেখা যায় যার মধ্যে একটা complex structure, একটা বৃহৎ সুষমা, একটা সমষ্টিগত মনোজ্ঞ সমাবেশ পাওয়া যায় ও তার মধ্যে একটা সীতা ও গভীর রস-উৎস বিরাজ করে। যেমন, ধরুন, বীণার তানের আনন্দঝোরার বিচিত্র লাবণা, য়ুরোপীয় সিমফনির বিরাট গরিমাময় গঠনকারুকলা, মধ্যযুগের যুরোপের অপূর্ব স্থািপতা, তাজমহলের সূক্ষ্মতিসূক্ষ্ম ভাস্কর্যের 5 ' . . . . . .