পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

झशैक्ष-ज्ञानादजी ܓܡ9 করিয়া কোনো কাজ করেন তাহা নহে, তাহারা কেবল চেচাইয়া বলিতে চান আমরা স্ত্রীস্বাধীনতার পক্ষপাতী। ইহাদের দ্বারা হানি এই হয় যে, ইহারা নিজ কার্যের সীমা-পরিসীমা কিছুই দেখিতে পান না- কোথা গিয়া পড়েন ঠিকানা থাকে না। কিন্তু যাঁহাদের হৃদয়ের মধ্যে একটি বিশ্বাস একটি সংস্কার ধ্রুবতারার মতো জ্বলিতে থাকে, তাহারা সেই ধ্রুবতারার দিকে লক্ষ্য কিনারা পাইবেন। কেবল দৈবাৎ কখনো স্রোতের বেগে ভাসিয়া বিপথে যান। আমাদের সমাজে আজকাল যে এইরূপ অস্বাভাবিক চিৎকার- প্ৰথা প্রচলিত হইতেছে, তাহার কারণ আর কিছু নহে, আমরা হঠাৎ সভ্য হইয়াছি। আমরা বিদেশ হইতে কতকগুলা অচেনা অনুগমন করিতে গিয়া এক প্রকার বলপূর্বক চেচাইয়া কাজ করিতে হয়। আমরা নিজেই এখন ভালো করিয়া বুঝিতে পারিতেছি না, কোন কাজগুলা আমরা বিশ্বাসের প্রভাবে করিতেছি, আর কোনগুলা কেবলমাত্ৰ অন্ধভাবে করিতেছি। কোনখানে আমরা নিজে দাঁড় টানিয়া যাইতেছি, আর আমরা তো আপনাকে ও পর্যকে প্ৰবঞ্চনা করিতেছি না? আমাদের ঘেরাপ দেখাইতেছে আমরা সত্যই কি তাহাই হইয়াছি? যদি হইতাম তাহা হইলে কি এত চেচাইতে হইত ? আর যদি না হইতেই পারিলাম, তবে কি মাংসখণ্ডের ছায়া দেখিয়া মুখের মাংসখণ্ডটি ফেলিয়া ভালো কাজ করিতেছি? শেষকালে কি অধ্রুবও যাইবে ধ্রুবও যাইবে? ভারতী म्†चून >२४*a জিহবা আস্ফালন আমাদের সমাজে একদল পালোয়ান লোক আছেন, তাহারা লড়াই ছাড়া আর কোনো কথা মুখে আনেন না। তাহদের অন্ত্রের মধ্যে একখানি ভেঁাতা। জিহবা ও একটি ইন্সিটল পেন। তাহারা মেচ্ছ । অনার্যদের প্রতি অবিরত শব্দভেদী বাণ বর্ষণ করিতেছেন ও পরমানন্দে মনে করিতেছেন তাহারা যে-যাহার বাসায় গিয়া মরিতেছে। তঁহাদের মুখগহবর হইতে ঘড়িঘড়ি এক-একটা বড়ো বড়ো হাওয়ার গোলা বাহির হইতেছে ও তাঁহাদের কল্পিত শক্রিপক্ষের আসমান-দুর্গের উপর এমনি বেগে গিয়া আঘাত করিতেছে ও তাহা হইতে এমনি মস্ত আওয়াজ বাহির হইতেছে যে, বীরত্বের গর্বে তাঁহাদের অল্প পরিসর একটুখানি বুক ফুলিয়া ফাটিয়া যাইবার উপক্রম হইতেছে। সুতরাং এই সকল মিলিটেরি ব্যক্তিদিগের নিজের গলার শব্দে নিজের কানে এমনি তালা ধরিয়াছে যে, এখন, কী সৌন্দর্যের মোহন বংশধ্বনি, কী বিশ্বপ্রেমের উদার আহবানস্বর, কী বিকাশমান অনন্ত জীবনের আনন্দ উচ্ছাস, কী পরদুঃখকাতরের করুণ সংগীত, কিছুই তীহাদের কানের মধ্যে প্রবেশ করিবার রাস্তা পায় না। যে-কেহ ভাঙা গলায় কামানের আওয়াজের নকল করিতে না চায়, যেকেহ শিশুদিগের মতো জুজুর অভিনয় করিয়া চতুর্দিকস্থ বয়স্ক-লোকদিগকে নিতান্ত শঙ্কিত করিতেছে কল্পনা করিয়া আনন্দে হতে পা না ছেড়ে, তাহারা তাহাদিগের নিকট খাতিরেই আসে না। তাহারা চান, ভারতবর্ষের যে যেখানে আছে, সকলেই কেবল লড়াইয়ের গান গায়, লড়াইয়ের কবিতা লেখে, মুখের কথায়, যতগুলা রাজা ও যতগুলা উজীর মারা সম্ভব সবগুলাকে মারিয়া ফেলে। যেন বঙ্গসাহিত্যের প্রতি ছত্রে বারুদের গন্ধ থাকে, যাহতে শুদ্ধমাত্র বঙ্গসাহিত্য পড়িয়া ভবিষ্যতের পুরাতত্ত্ববিদগণ একবাক্যে স্বীকার করেন যে, বাঙালিজাতির মতো এত বড়ো পালোয়ান জাতি আজ পর্যন্ত জন্মগ্রহণ করে নাই। ইহারা সর্বদা সশঙ্কিত, পাছে বঙ্গসমাজ খারাপ