পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

माछ 80 গিয়া থাকে। তবে সে মনের মধ্যে জানিল এক মুখে বলিল আর, অতএব সে মিথ্যাবাদী। আর যখন ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে কোনো কথা বলে তখন তাহার বিশ্বাস লইয়া সত্য মিথ্যা বিচার করিতে হয়। যে বলে কাল তোমার বাড়ি যাইব, তাহার মনে যদি বিশ্বাস থাকে যাইব না, তবেই সে মিথ্যাবাদী। অৰ্জ্জুন যে তাহার সত্য পালন করিলেন না সে যে তঁহার ক্ষমতাসত্ত্বেও কেবলমাত্র খেয়াল-অনুসারে করিলেন না। তাহা নহে, সহৃদয় ধৰ্মজ্ঞ ব্যক্তি পক্ষে সম্পূর্ণ অনতিক্রমণীয় গুরুতর বাধাপ্রযুক্ত করিতে পারিলেন না- মনুষ্য-জ্ঞানের অসম্পূর্ণতাবশত এ বাধার সম্ভাবনা তাহার মনে উদয় হয় নাই। যদি বা উদয় হইয়া থাকে। তবে মনুষ্যবুদ্ধির অসম্পূর্ণতাবশত বিশ্বাস হইয়াছিল যে, তথাপি সংকল্প রক্ষা করিতে পরিবেন, কিন্তু কাৰ্যকালে দেখিলেন তাহা তঁহার ক্ষমতার অতীত (শারীরিক ক্ষমতার কথা বলিতেছি না)। অতএব সত্যপালনে অক্ষম হওয়াকে মিথ্যা কথা কহা” বলা যায় না। যদি কেহ বলেন তবে তিনি মনুষ্যের সহজ বুদ্ধিকে নিতান্ত পীড়ন করিয়া বলেন। যদি বা আবশ্যকের অনুরোধে নিতান্তই বলিতে হয় তবে সকলেই একবাক্যে স্বীকার করবেন, সেখানে বিশেষ ব্যাখ্যারও নিতান্ত আবশ্যক। " বঙ্কিমবাবু এইরূপ বলেন যে, আমি যখন মহাভারতীয় কৃষ্ণেক্তির উপর বরাত দিয়াছি তখন অগ্ৰে সেই কৃষ্ণোক্তি অনুসন্ধান করিয়া পড়িয়া। তবে আমার কথার যথার্থ মর্মগ্রহণ করা সম্ভব। কিন্তু বঙ্কিমবাবু যখন তঁহার প্রবন্ধে মহাভারতীয় কৃষ্ণের বিশেষ উক্তির বিশেষ উল্লেখ করেন নাই, তখন, আমার এবং অনেক পাঠকের সর্বজনখ্যাত দ্ৰোণপৰ্বস্থ কৃষ্ণের সত্য-মিথ্যা সম্বন্ধে উক্তিই মনে উদয় হওয়া অন্যায় হয় নাই। বিশেষত যখন তঁহার লেখা পড়িয়া সত্য কথনের কথাই মনে হয়। সত্য পালনের কথা মনে হয় না। তখন মহাভারতের যে কৃষ্ণোক্তি তাহারই সমর্থনের স্বরূপ সংগত হয়। অগত্যা তাহাঁই আমাদের মনে আসে। মনে না। আসাই আশ্চর্য। বিশেষত সেইটাই অপেক্ষাকৃত প্রচলিত। ‘হত ইতি গজের কথা সকলেই জানে, কিন্তু গান্তীবের কথা এত লোক জানে না । যখন অৰ্থ বুঝিতে কষ্ট হয় তখনই লোকে নানা উপায়ে বুঝিতে চেষ্টা করে, কিন্তু যখন কোনো অর্থ সহজেই মনে প্ৰতিভাত হয় ও সাধারণের মনে কেবলমাত্র সেইরূপ অর্থই প্ৰতিভাত হওয়া সম্ভব বলিয়া মনে হয় তখন চেষ্টা করিবার কথা মনেই আসে না। আমি সেইজন্যই বঙ্কিমবাবুর উক্ত কথা বুঝিতে অতিরিক্ত মাত্রায় চেষ্টা করি নাই। * র মূল আলোচ্য বিষয় এইটুকু, এখন অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয়ের উল্লেখ করা যাক। বঙ্কিমবাবু একস্থলে কৌশলে ইঙ্গিতে বলিয়াছিলেন যে, আমার প্রবন্ধে আমি মিথ্যাকথা কহিয়াছি। যদিও বলিয়াছেন। কিন্তু তিনি যে তাহা বিশ্বাস করেন তাহা আমার কোনোমতেই বোধ হয় না, কৌতুক করিবার প্রলোভন ত্যাগ করিতে না পারিয়া তিনি একটি ক্ষুদ্র কথাকে কিঞ্চিৎ বৃহৎ করিয়া তুলিয়াছেন, এই মাত্র। আমি বলিয়াছিলাম, 'লেখক মহাশয় একটি হিন্দুর আদর্শ কল্পনা করিয়া বলিয়াছেন” ইত্যাদি। বঙ্কিমবাবু বলিয়াছেন, “প্ৰথম, “কল্পনা" শব্দটি সত্য নহে ; আমি আদর্শ হিন্দু ‘কল্পনা” করিয়াছি এ কথা আমার লেখার ভিতর কোথাও নাই! আমার লেখার ভিতরে এমন কিছুই নাই যে, তাহা হইতে এমন অনুমান করা যায়। প্রচারের প্রথম সংখ্যার হিন্দুধর্ম শীর্ষক প্ৰবন্ধ হইতে কথাটা রবীন্দ্রবাবু তুলিয়াছেন। পাঠক ওই প্ৰবন্ধ পড়িয়া দেখিবেন যে, “কল্পনা” নহে। আমার নিকট পরিচিত দুই জন হিন্দুর দোষগুণ বৰ্ণনা করিয়াছি।” উল্লিখিত প্রচারের প্রবন্ধে দুই জন হিন্দুর কথা আছে, একজন ধর্মস্রষ্ট আর-একজন আচারভ্রষ্ট। ধর্মস্রষ্ট হিন্দুর উল্লেখস্থলে তিনি বলিয়াছেন বটে, আমরা একটি জমিদার দেখিয়াছি, তিনি ইত্যাদি- কিন্তু আমা-কর্তৃক আলোচিত আচারভ্রষ্ট হিন্দুর উল্লেখস্থলে তিনি কেবলমাত্র বলিয়াছেন- “আর একটি হিন্দুর কথা বলি। কাল্পনিক আদর্শের উল্লেখকলেও এরূপ ভাষা এয়োগ করা হইয়া থাকে। প্ৰথমে একটি সত্য উদাহরণ দিয়া তাহার পরেই সর্বতোভাবে তাহার একটি বিরুদ্ধ-পক্ষ খাড়া করিবার উদ্দেশ্যে একটি কাল্পনিক উদাহরণ গঠিত করা অনেক স্থলেষ্ট