পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ede রবীন্দ্র-রচনাবলী দিকে মুখ তুলিয়া অকস্মাৎ তারম্বরে অসম্মান জানাইয়া যাইত না। মনের ভাব যখন মনে ছিল সে যেন আমার গৃহদেবতা ইষ্টদেবতা ছিল; এখন কী মনে করিয়া তাহাকে চতুষ্পপথে বটবৃক্ষের তলায় স্থাপন করিলাম? সকল জীবজন্তই কি তাহার সম্মান বোঝে ? যদি বা না বোঝে তবুও কি তাহাকে বিশ্বের চোখের সামনে পাথর হইয়া বসিয়া থাকিতে হয় ÄR তাহার পর আবার আত্মীয় বন্ধুদের কাছেও জবাবদিহি আছে। এটা কেন লিখিলে, ওটা কীভাবে বলিলে, সেটার অর্থ কী? এও তো বিষম দায়! যেন আমি কোদাল দিয়া পথ কাটিতেছি। যাহা হীেক, ঝগড়া কাহার সহিত করিব? জন্মকালে অদৃষ্ট পুরুষ ললাটে এইরূপ লিখিয়া গিয়াছেন। বসিয়া কিন্তু সেই প্ৰবীণ ভাগ্যলিপিলেখক মহাশয়কে তাহার কোন লিখনের জন্য সহস্ৰ লাঞ্ছনা করিলেও তিনি দিব্য গা-ঢাকা দিয়া বসিয়া থাকেন। আর তাঁহারই বশবতী হইয়া আমরা যদি দুটাে কথা লিখি তাহা হইলে কথার আর শেষ থাকে না। পকেটবুক রচনাকাল : ফাল্গুন ১২৯৯} সম্পাদকের বিদায় গ্ৰহণ এক বৎসর ভারতী সম্পাদন করিলাম। ইতিমধ্যে নানা প্রকার ক্রটি ঘটিয়াছে। সে-সকল ত্রুটির যতী-কিছু কৈফিয়ত প্রায় সমস্তই ব্যক্তিগত। সাংসারিক চিন্তা চেষ্টা আধিব্যাধি ক্রিয়াকর্মে সম্পাদকের সঙ্গে সঙ্গে ভারতীকেও নানারূপে বিক্ষিপ্ত হইতে হইয়াছে। নিরুদবিগ্ন অবকাশের অভাবে পাঠকদেরও আশা পূর্ণ করিতে পারি নাই এবং সম্পাদকের কর্তব্য সম্বন্ধে নিজেরও আদর্শকে খণ্ডিত করিয়াছি। সম্পাদক যদি অনন্যকর্ম হইয়া কৰ্ণধারের মতো পত্রিকার চুড়ার উপর সর্বদাই হাল ধরিয়া বসিয়া থাকিতে পারেন। তবেই তাহার যথাসাধ্য মনের মতো কাগজ চালানো সম্ভব হইতে পারে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমাদের দেশের সম্পাদকের পত্ৰসম্পাদন হালগোরুর দুধ দেওয়ার মতো— জোগান দিতে হয়; তাহতে পরম ধৈৰ্যবান জন্তুটিরও প্রাণান্ত হইতে থাকে, ভোক্তাও তেঁাহার বার্ষিক তিন টাকা হিসাবে ফাকি পড়িল বলিয়া রাগ করিয়া উঠেন। ধনী পল্লীতে যে দরিদ্র থাকে তাহার চাল খারাপ হইয়া যায়। তাহার ব্যয় ও চেষ্টা আপন সাধ্যের বাহিরে গিয়া পড়ে। য়ুরোপীয় পত্রের আদর্শে আমরা কাগজ চালাইতে চাই- অথচ অবস্থা সমস্ত বিপরীত। আমাদের সহায় সম্পদ অর্থবল লোকবল লেখক পাঠক সমস্তই স্বল্পঅথচ চাল বিলাতি, নিয়ম অত্যন্ত কড়া; সেই বিভ্ৰাট হয় কাগজ, নয় কাগজের সম্পাদক মারা পড়ে। is. ঠিক মাসান্তে ভারতী বাহির করিতে পারি নাই; সেজন্য যথেষ্ট ক্ষোভ ও লজ্জা অনুভব করিয়াছি। একা সম্পাদককে লিখিতে হয়, লেখা সংগ্ৰহ করিতে হয় এবং অনেক অংশে প্রািফ ও প্ৰবন্ধ সংশোধন করিতে হয়। এদিকে দেশী ছাপাখানার ক্ষীণ প্ৰাণ, কম্পোজিটর অঙ্গ, స్టో কম্পোজিটরের রোগতাপও ঘটে এবং প্লেগের গোলমালে ঠিক লোক পাওয়াও इ:। যে ব্যক্তি পত্র চালনাকেই জীবনের মুখ্য অবলম্বন করিতে পারে, এই সকল বাধা-বিয়ের সহিত প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করা তাহাকেই শোভা পায়। কিন্তু পত্রের অধিকাংশ নিজের লেখার দ্বারা