পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૭ા রবীন্দ্র-রচনাবলী সোশ্যালিস্টগণ যে পণ করিয়াছেন তাহা প্রকৃতিবিরুদ্ধ। গ্রন্থকর্তা তদুত্তরে বলেন। ধনহীন স্বাধীনতা অসম্ভব, কথাটা সত্য। সেইজন্যই ধন সাধারণের মধ্যে ভাগ করিয়া দেওয়া বিশেষ আবশ্যককারণ, তাহা ব্যতীত স্বাধীনতা সর্বসাধারণের মধ্যে কিছুতেই ব্যাপ্ত হইতে পারে না। অতএব দেখা যাইতেছে সর্বসাধারণের স্বাধীনতাই সোশ্যালিজমের উদ্দেশ্য। এখন, কথা উঠিতে পারে যে, উদ্দেশ্য যাহাঁই হউক ফলে বিপরীত হইবে। কারণ, এখন স্বার্থের তাড়নায় লোকে খাটিতেছে এবং সমাজের কাজ চলিয়া যাইতেছে, কিন্তু ধনের প্রলোভন চলিয়া গেলে সমাজের তাড়নায় লোককে কাজ করিতেই হইবে, সে পীড়ন কম নহে। সকলেই ইচ্ছামতো আলস্যে নিযুক্ত থাকিলে কখনো সমাজ টিকিতে পারে না, অতএব একটা কোনোরাপ পীড়নের প্রথা থাকিবেই। গ্রন্থকার বলেন, একেবারে কোনোরাপ পীড়ন ব্যতীত সংসার চলে না, এখনকার বিধানমতে সমাজে অন্ধ পীড়নের প্রাদুর্ভাব, কিন্তু সোশ্যালিজমের নিয়মে সমাজে যুক্তি ও বিবেচনাসংগত যথাবশ্যক সুসংযত পীড়ন প্রচলিত হইবে। এবং স্বার্থের সংস্রব না থাকাতে সে পীড়ন ক্ৰমশ হ্রাস হইতে থাকিবে এরাপ আশা করা যায়। ব্যাক্সসাহেব বলেন, আদিমকালে সাধারণের মধ্যে ধনের বিভাগ ছিল, সভ্যতার প্রাদুর্ভাবে ক্রমে তাহার ব্যত্যয় হয়; ক্ৰমে সকলের স্ব স্ব প্রধান হইবার বাসনা জন্মে, প্রধান হইতে চেষ্টা করিলেই স্বভাবত দুই বিরোধী প্রতিদ্বন্দ্বী দলের সৃষ্টি হয়। এইরূপে সামাজিক ঐক্য নষ্ট হইয়া পার্থক্যের জন্ম হইতে থাকে। পূর্বে কেবলমাত্র বহির্জাতির সহিত শক্রিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল, এখন প্রত্যেকে বড়ো হইতে চেষ্টা করিয়া ঘরের মধ্যে দলাদলি ঘটিতে থাকে। সভ্যতার স্বাভাবিক ফল এই । ইহার প্রধান লক্ষণ, সমাজের সহিত ব্যক্তির বিরোধ- প্ৰত্যেকের সমগ্রের অপেক্ষা অধিক ক্ষমতা হস্তগত করিবার চেষ্টা। সোশ্যালিজম সকলের মধ্যে ধনের সমবিভাগ করিয়া দিয়া পুনশ্চ সকলকে একতন্ত্রের মধ্যে বাঁধিতে চাহে এবং এই উপায়ে সকলকে যথাসম্ভব স্বাধীনতার অধিকারী করিতে চাহে, মানবসমাজে ঐক্য এবং স্বাধীনতার সামঞ্জস্য ইহার উদ্দেশ্য।” tejš o asa প্রাচীন শূন্যবাদ মায়ার হস্ত এড়াইবার উদ্দেশ্যে কীরাপ তর্কের মায়াপাশ বিস্তার করিতে হয় তাহার একটি দৃষ্টান্ত পাঠকদের কৌতুহলজনক বোধ হইতে পারে। গ্ৰন্থখানির নাম মধ্যমকবৃত্তি। ইহা বিনয় সূত্ৰ’ নামক কোনো এক প্রাচীন বৌদ্ধ গ্রন্থের প্রাচীন ভাষ্য। ভাষ্যকারের নাম চন্দ্ৰকীর্তি আচার্য। ইনি একজন শূন্যবাদী। কিছুই যে নাই। ইহা প্রমাণ করাই ইহার উদ্দেশ্য। কী করিয়া প্রমাণ করিতেছেন দেখা যাউক । প্ৰথমে প্রতিপক্ষ বলিলেন- দর্শন শ্রবণ দ্রাণ রসন স্পৰ্শন এবং মন এই ছয় ইন্দ্ৰিয়ের দ্বারা দ্রষ্টব্য প্রভৃতি বিষয় আমাদের গোচর হইয়া থাকে। টীকাকার বলিতেছেন, দর্শন যে একটা স্বাভাবিক শক্তি উপরি-উক্ত বচনে এই কথা মনিয়া লওয়া হইল। কিন্তু তাহা হইতে পারে না। দর্শনশক্তি যে আছে। এ কথা কে বলিল ? কারণ, স্বমাত্মানং দর্শনং হি তত্ত্বমেব ন পশ্যতি।। ন পশ্যতি যদাত্মানং কথং ব্ৰক্ষ্যতি তৎ পরান। । অর্থাৎ চক্ষু আপনার তত্ত্ব আপনি দেখিতে পায় না, অতএব যে আপনাকে দেখিতে পায় না। সে an