পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

रान्नरकौडूक ¢२¢ তখন ধর্ম বলিলেন, লোকাচারকে আমার অধীনস্থ কর্মচারী বলিয়া জানিতাম, কিন্তু সে তো আমার সঙ্গে পরামর্শমাত্র না করিয়া আপন ইচ্ছামতে যাহ-তাহ করে, তবে সেই ছোড়াটাকেই সিংহাসন ছাড়িয়া দিলাম। বায়ু কহিলেন, ‘পৃথিবীতে এখন উনপঞ্চাশ দিকে উনপঞ্চাশ বায়ু বহিতেছে, চাইকি, এখন আমি অবসর লইতে পারি।’ আদিত্য কহিলেন, ‘মানবসমাজে বিস্তর খদ্যোত উঠিয়াছে ; তাহার মনে করিতেছে, সূর্য না হইলেও আমরা একলা কাজ চালাইতে পারি। জগৎ আলোকিত করিবার ভার তাহদের উপর দিয়া আমি অস্তাচলে বিশ্রাম করিতে ইচ্ছা করি। ভগবান চন্দ্রমা শুরুপ্রতিপদের রুশমূর্তি ধারণ করিয়া কহিলেন, নিরলোকে কবির তাহদের প্রেয়সীর পদনথরকে আমা অপেক্ষা দশগুণ প্রাধান্ত দিয়া থাকেন, অতএব যে পর্যন্ত কবিরমণী-মহলে পাদুকার সম্পূর্ণ প্রচলন না হয় সে পর্যন্ত আমি অন্তঃপুরে যাপন করিতে চাই। এমনকি, ভোলানাথ শিব অর্ধনিমীলিত নেত্ৰে কহিলেন, “আম অপেক্ষা বেশি গাজা টানে পৃথিবীতে এমন লোকের তে অভাব নাই ; সেই-সমস্ত সংস্কারকদিগের উপর আমার প্রলয়কার্যের ভার দিয়া আমি অনায়াসে নিশ্চিন্ত থাকিতে পারি। এমনকি, আমি নিশ্চয় জানি, আমার ভূতগুলারও কোনো আবশুক হইবে না।’ 頓 সর্বশেষে যখন শুভ্ৰবসন অমলকমলাসনা সরস্বতী উঠিয়া বীণানিন্দিত মধুরস্বরে দেবদমাজে তাহার নিবেদন আরম্ভ করিলেন, তখন দেবগণ দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিলেন এবং মহেন্দ্রের সহস্ৰ চক্ষের পল্লব সিক্ত হইয়া উঠিল। দেবী কহিলেন, ‘অন্যান্য নানা কার্যের মধ্যে বালকদিগকে শিক্ষাদানের ভার এতদিন আমার উপর ছিল, কিন্তু সে কার্য আমি কিছুতেই চালাইতে পারিব না। আমি রমণী, আমার মাতৃহৃদয়ে শিশুদিগের প্রতি কিছু দয়ামায়া আছে— তাহাদের পাঠের জন্য আজকাল যে-সকল পুস্তক নির্বাচিত হয় সে আমি কিছুতেই পড়াইতে পারিব না। আমার হৃদয় বিদীর্ণ হয় এবং তাহাদের ক্ষুদ্র শক্তি ভাঙিয়া পড়ে। এ নিষ্ঠুর কার্য একজন বলিষ্ঠ পুরুষের প্রতি অৰ্পিত হইলেই ভালো হয়। অতএব মুরসভায় আমি সামুনয়ে প্রার্থনা করি, যমরাজের প্রতি উক্ত ভার দেওয়া হউক।’ যমরাজ তৎক্ষণাৎ উঠিয়া প্রতিবাদ করিলেন, “আমার কোনো আবশ্বক নাই, কারণ, ইস্কুলের মাস্টার এবং ইনস্পেক্টর আছে।’ শিশুশিক্ষা-বিভাগে যমরাজের বিশেষ নিয়োগ যে বাহুল্য এ সম্বন্ধে দেবতাদের কোনো মতভেদ রহিল না ।