পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○88 রবীন্দ্র-রচনাবলী ১ । আমি নিজে জানি বেঙ্কটবর্মার কাছ থেকে চুরি । হা, সে ছিল বটে গুণীর মতো গুণী- কত বড়ো মাথা- ওরে বাস রে! অথচ বিভূতি পায় শিরোপা, আর সে গরিব না খেতে পেয়েই মারা গেল । ৩ । শুধুই কি না খেতে পেয়ে ? ১ । আরে, না খেতে পেয়ে কি কার হাতের দেওয়া কী খেতে পেয়ে সে কথায় কাজ কী ? আবার কে কোন দিক থেকে— নিন্দুকের তো অভাব নেই। এ দেশের মানুষ যে কেউ কারও ভালো সইতে 965 की | ২ । তা, তোরা যাই বলিস, লোকটা কিন্তু১। আহা, তা হবে না কেন ? কোন মাটিতে ওর জন্ম, বুঝে দেখা ঐ চবুয়া গীয়ে আমার বুড়ো দাদা ছিল, তার নাম শুনেছিস তো ? ২। আরে বাস রে !! তার নাম উত্তরকুটের কে না জানে ? তিনি তো সেই— ঐ যে কী বলে— ১ । হা, হী, ভাস্কর । নাস্যি তৈরি করার এত বড়ো ওস্তাদ এ মুম্বুকে হয় নি। তার হাতের নস্যি না হলে রাজা শত্রুজিতের একদিনও চলত না | ৩ । সে-সব কথা হবে, এখন মন্দিরে চল । আমরা হলুম বিভূতির এক গায়ের লোক- আমাদের হাতের মালা আগে নিয়ে তবে অন্য কথা । আর আমরাই তো বসব তার ডাইনে । নেপথ্যে। যেয়ে না ভাই, যেয়ে না, ফিরে যাও । ২। ঐ শোনো বটুক বুড়ো বেরিয়েছে। বটুকের প্রবেশ ১ । কী বঁটু, যােচ্ছ কোথায় ? বটু। সাবধান, বাবা, সাবধান। যেয়ে না ও পথে, সময় থাকতে ফিরে যাও । ২ । কেন বলে তো । - বটু। বলি দেবে, নরবলি। আমার দুই জোয়ান নাতিকে জোর করে নিয়ে গেল আর তারা ফিরল ୩ | ৩ । বলি কার কাছে দেবে খুড়ো ? বটু। তৃষ্ণা, তৃষ্ণাদানবীর কাছে। ২ । সে আবার কে ? বটু। সে যত খায় তত চায়- তার শুষ্ক রসনা ঘি-খাওয়া আগুনের শিখার মতো কেবলই বেড়ে ১। পাগলা ! আমরা তো যাচ্ছি। উত্তরভৈরবের মন্দিরে, সেখানে তৃষ্ণাদানবী কোথায় ? বটু। খবর পাও নি ? ভৈরবকে যে আজ ওরা মন্দির থেকে বিদায় করতে চলেছে। তৃষ্ণা বসবে বেদীতে । ২। চুপ চুপ পাগলা । এ-সব কথা শুনলে উত্তরকুটের মানুষ তোকে কুটে ফেলবে । বটু। তারা তো আমার গায়ে ধুলো দিচ্ছে, ছেলেরা মারছে ঢেলা। সবাই বলে তোর নাতি-দুটাে প্ৰাণ দিয়েছে সে তাদের সৌভাগ্য । ১ । তারা তো মিথ্যে বলে না । বটু। বলে না মিথ্যে ? প্রাণের বদলে প্ৰাণ যদি না মেলে, মৃত্যু দিয়ে যদি মৃত্যুকেই ডাকা হয়, তবে ভৈরব এত বড়ো ক্ষতি সইবেন কেন ? সাবধান, বাবা, সাবধান, যেয়ে না ও পথে । [ প্ৰস্থান