পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ধর্ম 8 Vt \SC উপনিষদের ব্ৰহ্ম সেইরূপ । তিনি অন্তরে-বাহিরে সর্বত্ৰ— তিনি অন্তরতম, তিনি সুদূরতম । তাহার কো হোিবন্যাৎ কঃ প্ৰাণ্যাৎ যদোষ আকাশ আনন্দো ন স্যাৎ । কেই বা শরীরচেষ্টা করিত, কেই বা জীবিত থাকিত, যদি আকাশে এই আনন্দ না থাকিতেন । মহাকাশ পূর্ণ করিয়া নিরন্তর সেই আনন্দ বিরাজ করিতেছেন বলিয়াই আমরা প্রতিক্ষণে নিশ্বাস লাইতেছি, আমরা প্ৰতিমুহূর্তে প্ৰাণধারণ করিতেছি।-- এতস্যৈবানন্দ স্যান্যানি ভতনি মাত্রামুপজীবন্তি । এই আনন্দের কণামাত্র আনন্দকে অন্যান। জীবসকল উপভোগ করিতেছে । আনন্দাদ্ধোব খদ্বিমানি ভূতানি জায়ন্তে, আনন্দং প্ৰয়ন্ত্যাভিসংবিশন্তি । সেই সর্বব্যাপী আনন্দ হইতেই এই সমস্ত প্ৰাণী জন্মিতেছে, সেই সর্বব্যাপী আনন্দের দ্বারাই এই সমস্ত প্রাণী: জীবিত আছে, সেই সর্বব্যাপী আনন্দের মধ্যেই ইহারা গমন করে, প্রবেশ করে } ঈশ্বর-সম্বন্ধে যত কথা আছে, এই কথাই সর্বাপেক্ষা সৰ্ব্বল, সর্বাপেক্ষা সহজ । ব্ৰহ্মের এই ভাব গ্রহ করিবার জন্য কিছু কল্পনা করিতে হয় না, কিছু রচনা করিতে হয় না, দুধ যাইতে হয় না, দিনক্ষণের অপেক্ষা করিতে হয় না--- হািদয়ের মধ্যে আগ্রহ উপস্থিত হইলেই, তাহাকে উপলব্ধি করিবার যথার্থ ইচ্ছা জন্মিলেই, নিশ্বাসের মধ্যে তাহার আনন্দ প্রবাহিত হয়, প্ৰাণে তাহার আনন্দ কম্পিত হয়, বুদ্ধিতে তাহার আনন্দ বিকীর্ণ হয়, ভোগে তাহার আনন্দ প্ৰতিবিম্বিত দেখি ; দিনের আলোক যেমন কেবলমাত্র চক্ষু মেলিবার অপেক্ষা রাখে, ব্রহ্মের আনন্দ সেইরূপ হৃদয় উন্মলনের অপেক্ষা রাখে মাত্র । আমি একদা একখানি নৌকায় একাকী বাস করিতেছিলাম ; একদিন সায়াহে একটি মোমের বাতি জুলাইয়া পড়িতে পড়িতে অনেক রাত হইয়া গেল ! শ্ৰান্ত হইয়া যেমনি বাতি নিবাইয়া দিলাম, আমনি একমুহুর্তেই পূর্ণিমার চন্দ্ৰলোক চারি দিকের মুক্ত বাতায়ন দিয়া আমার কক্ষ পরিপূর্ণ করিয়া দিল |’ আমার স্বহস্তেজালিত একটিমাত্র ক্ষুদ্র বাতি এই আকাশপরিপ্লবী অজস্র আলোককে আমার নিকট হইতে অগোচর করিয়া রাখিয়াছিল । এই অপরিমেয় জ্যোতিঃসম্পদ লাভ কবিবার জন্য আমাকে আব কিছুই করিতে হয় নাই, কেবল সেই বাতিটি এক ফুৎকারে নিবাহীয়া দিতে হইয়াছিল। তাহার পরে কী পাইলাম । বাতির মতো কোনো নাড়িবার জিনিস পাই নাই, সিন্দুকে ভরিবার জিনিস পাই নাই--- পাইয়াছিলাম আলোক আনন্দ সৌন্দর্য শান্তি । যাহাকে সরাইয়াছিলাম, তাহার চেয়ে অনেক বেশি। পাইয়াছিলাম।-- অথচ উভয়কে পাইবার পদ্ধতি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র । ব্ৰহ্মকে পাইবার জন্য সোনা পাইকার মতো চেষ্টা না করিয়া আলোক পাইবার মতো চেষ্টা করিতে হয় । সোনা পাইবার মতো চেষ্টা করিতে গেলে নানা বিরোধ-বিদ্বেষ-বাধাবিপত্তির প্রাদুর্ভাব হয়, আর আলোক পাইবার মতো চেষ্টা করিলে সমস্ত সহজ সরল হইয়া যায় । আমরা জানি বা না জানি, ব্রহ্মের সহিত আমাদের যে নিত্য সম্বন্ধ আছে, সেই সম্বন্ধের মধ্যে নিজের চিত্তকে উদবোধিত করিয়া তোলাই ব্ৰহ্মপ্ৰাপ্তির সাধনা | ভারতবর্ষে এই উদবােধনের যে মন্ত্র আছে, তাহাও অত্যন্ত সরল। তাহা এক নিশ্বাসেই উচ্চারিত হয়— তাহা গায়গ্ৰীমন্ত্র। ওঁ ভুর্ভূবঃ স্বঃ— গায়ত্রীর এই অংশটুকুর নাম ব্যাহতি । ব্যাহতিশব্দের অর্থ— চারি দিক হইতে আহরণ করিয়া আনা । প্রথমত ভূলোক-ভুবলোক-স্বর্লোেক অর্থাৎ সমস্ত ১. তুলনীয় “পূর্ণিমা”, “চিত্রা, রবীন্দ্র-রচনাবলী চতুর্থ খণ্ড, পৃ. ৭৬ (সুলভ দ্বিতীয় খণ্ড পূ: ১৭৩), ছিন্নপত্র ইহঁতে উদধূত পত্র (শিলাইদা ১২ ডিসেম্বর ১৮৯৫), রবীন্দ্র-রচনাবলী চতুর্থ খণ্ড, পৃ. ৫৪৮ (সুলভ দ্বিতীয় খণ্ড o bry (4) ||