তারা বিস্মিত হইল। শব্দটা যে পেঁচার চীৎকার সে বিষয়ে তাহার সন্দেহ হইল না—পেঁচার ডাক না হইলেও তাহা এমন কিছু ভয়াবহ নয়। অন্তত তাহার মনে হইল যে, এক ভাবী অমঙ্গলের আশঙ্কা ছাড়া উহাতে ভয়ের বিশেষ কিছু নাই—এই অমঙ্গল-ধ্বনি লোকে তো প্রত্যহ শোনে এবং সহ্য করে। তাহার একবার শুধু মনে হইল আওয়াজটা যেন নিশাচর পাখীর ডাকের মতনই কিন্তু ঠিক যেন পেঁচার ডাক নয়। তাহার কৌতুহল উদ্রিক্ত হওয়াতে সেও কক্ষের বাহিরে আসিল। স্বামী সিঁড়ি দিয়া নীচে নামিয়া গিয়াছেন বুঝিয়া সে উপরের সিঁড়ি দিয়া ছাদে গিয়া উঠিল, সেখান হইতে ব্যাপারটার কিছু কিনারা হইতেও পারে! যেদিক হইতে শব্দটা আসিয়াছিল, সেদিকে কিছুক্ষণ নিবিষ্টচিত্তে চাহিয়া থাকিয়াও সে কিছু বুঝিতে পারিল না। সুতরাং শব্দটা পেঁচারই চীৎকার হইবে এইরূপ ভাবিয়া লইয়া সে সেদিকে বেশি নজর দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করিল না। পাখীটা নিশ্চয়ই কাছাকাছি ডালপালার অন্তরালে অথবা ছাদের কোণে কার্নিশের উপর কোথাও বসিয়া আছে—স্বামী এই সুযোগে হঠাৎ কক্ষ ত্যাগ করিয়া তাঁহার মনের কোণে যে দুর্ব্বলতা প্রকাশ পাইতেছিল তাহাই সামলাইয়া লইলেন। তারা নীচে নামিতে যাইবে এমন সময় সহসা দেখিল, একটি মনুষ্য-মূর্ত্তি তাহাদের খিড়কির দরজা দিয়া বাহির হইতেছে— বাড়ির কোনও স্ত্রীমূর্ত্তি তাহা নয়—স্পষ্ট পুরুষের মূর্ত্তি। ভাল করিয়া দেখিতে গিয়া তারা বুঝিল মূর্তিটি স্বামীর—মথুর দরজা পার হইয়া দ্রুতবেগে জঙ্গলের মধ্যে প্রবেশ করিল। তারা বিস্ময়বিমূঢ় হইয়া দাঁড়াইয়া রহিল। তাহার সমস্ত দেহ থরথর করিয়া কাঁপিতে লাগিল। তাহার ভয় হইল, সে মূর্চ্ছিত হইয়া পড়িয়া যাইবে। সহস্র অনিশ্চিত আশঙ্কা ও যন্ত্রণাদায়ক সন্দেহ তাহার মনে ঝড়ের মত বহিয়া গেল। তাহার স্বামী অপদার্থ হওয়া সত্ত্বেও সে তাহাকে ভালবাসিত, কোনও পৈশাচিক পাপকার্য্যে যে সে সহায় হইতে পারে, এরূপ ভাবা তাহার পক্ষে সম্ভব হইল না। তথাপি
পাতা:রাজমোহনের স্ত্রী.djvu/১২০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১২
রাজমোহনের স্ত্রী
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/5/5c/%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A6%AE%E0%A7%8B%E0%A6%B9%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%B0_%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%80.djvu/page120-1024px-%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A6%AE%E0%A7%8B%E0%A6%B9%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%B0_%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%80.djvu.jpg)