প্রতি দর্শকের হৃদয় আর্দ্র করিয়া তুলিলেও কোথায় যেন একটা বাধা ঘটাইতেছিল। তারার দুই চোখ বহিয়া অশ্রু গড়াইয়া পড়িল। রমণীসুলভ হৃদয়ের ব্যাকুলতা ও সূক্ষ্ম অনুভূতির দ্বারা সে স্বামীর মুখভাবের এই অস্বাভাবিক পরিবর্ত্তন লক্ষ্য করিল।
ব্যথিত পত্নী বলিয়া উঠিল, কি কুক্ষণেই না আমি জন্মেছিলাম! এখনও আমার পাপের প্রায়শ্চিত্ত বুঝি হয় নি! তোমাকে যদি প্রাণ দিয়েও সুখী করতে পারি, তাও আমি করব! কি শুভক্ষণেই না জানি জন্মেছিলাম! তোমার দুঃখের কারণটাও আমি জানতে পাব না?
স্ত্রীর ক্রন্দন মথুরের হৃদয় স্পর্শ করিল। অপরাধ স্বীকারের ভঙ্গীতে সে অবশেষে বলিল, আমার দুশ্চিন্তার কারণ তোমার কাছ থেকে গোপন রেখে লাভ নেই, তারা। তোমার কাছেও আমি কিছু খুলে বলতে ভরসা করছি না—তুমি সে জন্য দুঃখ ক’রো না। তোমার শোনার উপযুক্ত কথা সে নয়।
স্বামীর এই কথা শুনিয়া তাহার ম্লান অথচ মহিমান্বিত মুখমণ্ডলে মুহূর্ত্ত কালের জন্য গভীর যন্ত্রণার রেখা ফুটিয়া উঠিল, কিন্তু পরক্ষণেই সে শান্ত সহজভাবে দাঁড়াইয়া উঠিয়া বলিল, তা হ’লে আমার একটা সামান্য অনুরোধ রাখবে বল, আমাকে কথা দাও।
কিন্তু তাহার কথা সমাপ্ত হইবার পূর্ব্বেই অদূরে পেঁচার চীৎকারের মত এক বিকট কর্কশ-হুঙ্কার শোনা গেল। সেই শব্দ শুনিয়া মথুর চকিতে উঠিয়া দাঁড়াইল।
তারা জিজ্ঞাসা করিল, হ্যাঁ গো, তুমি চমকালে কেন? শব্দটা শুনে আমার বড্ড ভয় হ’ল বটে, কিন্তু ও তো প্যাঁচার ডাক।
আরও কর্কশ আরও ভীষণভাবে সেই শব্দ আবার বাতাসে ভাসিয়া আসিল। তারা কিছু বলিবার পূর্ব্বেই মথুর বেগে সেই কক্ষ হইতে নিষ্ক্রান্ত হইল।