বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:রাজমোহনের স্ত্রী.djvu/১৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩৪
রাজমোহনের স্ত্রী

 উভয়ে উভয়ের প্রতিজ্ঞা পালন করিয়াছিল। মথুর প্রত্যহ একবার দেখিয়া আসিত তাহার ঔষধ ধরিতেছে কি না! মাধব যখন মাতঙ্গিনীকে উদ্ধার করিল, তখন সে অনাহারে মৃতপ্রায়।

 ভোর হইবার পূর্ব্বেই মাধব চলিয়া গেল, দুর্ব্বলতাবশত মাতঙ্গিনী তখনই যাইতে পারিল না; মাধব ও তারা পরামর্শ করিয়া স্থির করিল যে, সন্ধ্যা পর্য্যন্ত মাতঙ্গিনী তারার কাছেই থাকিবে, করুণা আসিয়া সন্ধ্যার পর তাহাকে লইয়া যাইবে।

 মাধবকে নিরাপদে বাড়ির বাহিরে পাঠাইয়া তারা মাতঙ্গিনীর নিকট ফিরিয়া আসিয়া ঠাট্টা করিয়া বলিল, এবার তাহাকে বন্দী করিয়া রাখিবার পালা তাহার—এই বলিয়া সে সাবধান হইবার জন্য দরজা বন্ধ করিয়া দিল। তারা তারপর স্বামীর কক্ষে ফিরিয়া চাবির গোছা যথাস্থানে রাখিয়া শয্যায় শয়ন করিল, যেন রাত্রিকালে সে বাড়িতে একটি মূষিকও নড়াচড়া করে নাই, এইরূপ ভাব। শয়ন করিয়া তারা কি নিদ্রা যাইতে পারিল? না, সে স্বামীর গোপন কথাটি জানিয়াছে এবং তাহার উদার মনে সে জ্ঞান অসম্ভব দুঃখ বহন করিয়া আনিয়াছে। সেই রজনীর দৃশ্যপটে যাহার যাহার আবির্ভাব হইয়াছিল, এই বিশ্বস্তা এবং প্রেমময়ী পত্নীই তাহাদের মধ্যে যন্ত্রণা ভোগ করিল সর্ব্বাপেক্ষা অধিক—স্বামীর গুপ্ত রহস্যের জঘন্যতায় সে শিহরিয়া উঠিয়াছিল।

 মাতঙ্গিনী সমস্ত দিনটা তাহার নির্জ্জন কক্ষে নিরাপদে কাটাইল। সন্ধ্যার পরে করুণা পূর্ব্ব বন্দোবস্তমত আসিয়া তাহাকে লইয়া গেল। বহুদিনের দুর্দ্দশা ও দুঃখ ভোগের পর মাতঙ্গিনী হেমাঙ্গিনীকে বুকে চাপিয়া ধরিল।

 মিলনের আনন্দ কতকটা প্রশমিত হইলে হেম বলিল, দিদি, তুমি বল, আর কখনও আমাকে ছেড়ে যাবে না?

 মাতঙ্গিনী দীর্ঘশ্বাস ফেলিল, তাহার চোখ দুইটি জলে ভরিয়া গেল।