উপায় নাই, উপায় নাই, তাহাকে চিরকাল এই অভিশপ্ত জীবন যাপন করিতে হইবে।
এক-একবার এই সকল চিন্তায় তাহার বক্ষ উদ্বেলিত ছিন্নভিন্ন হইতে লাগিল—পরক্ষণেই যে পাপকর্ম্মে তাহার স্বামী সহায় হইতে যাইতেছে, তাহার ভীষণতা তাহার মানসচক্ষে স্পষ্ট হইয়া উঠিতে লাগিল। এই দুশ্চিন্তায় সে কম্পান্বিত-কলেবর হইতে লাগিল। এই ভীষণ দুষ্কার্য্যের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হইবে তাহারই হেমাঙ্গিনী এবং তাহারই মাধব। তাহার গাত্র রোমাঞ্চিত হইল, শিরায় শিরায় যেন ফুটন্ত রক্ত প্রবাহিত হইল, সে মাথায় অসহ্য যন্ত্রণা অনুভব করিল। তাহার অত্যন্ত প্রিয় আপনার জন, যাহারা নিশ্চিন্ত নির্ভয়ে নিদ্রাগত অথচ যাহাদের দ্বারে দারিদ্র্য ও দুর্ভোগ, সম্ভবত ভীষণতর কিছু, তাহাদিগকে দণ্ডকালমধ্যে গ্রাস করিবার জন্য ওত পাতিয়া বসিয়া আছে, তাহাদের মঙ্গলচিন্তায় সে নিজের অভিশপ্ত ভবিষ্যৎ ও লাঞ্ছিত নারীত্বের কথা পর্য্যন্ত বিস্মৃত হইল। যদি নিজের জীবন দিয়াও তাহাদিগকে বাঁচাইতে হয়, তাহাও করিতে হইবে।
নিজেদের বাড়ির সকলকে জাগাইয়া তুলিবার কথাই তাহার সর্ব্বপ্রথমে মনে হইল। কিন্তু পর-মুহূর্ত্তেই সে বুঝিতে পারিল, তাহা সুবুদ্ধির কাজ হইবে না। রাজমোহন যে এরূপ করিতে পারে, তাহা সে বলিলেও কে বিশ্বাস করিবে? তাহার পিসীমা বিশ্বাস করিবে! তাহার বোন! তাহারা মনে করিবে, নিশ্চয়ই তাহার মাথা খারাপ হইয়া গিয়াছে। সে স্বপ্ন বা বিকারের ঘোরে প্রলাপ বকিতেছে। যদি তাহারা বিশ্বাসও করে, মাধবকে বাঁচাইবার জন্য রাজমোহনের বিপদ তাহারা কখনও ডাকিয়া আনিবে না। তাও যদি তাহারা করিতে চায়, মাধবকে কি তাহারা বাঁচাইতে পারিবে? না, তাহারা আত্মীয় রাজমোহনকে এমনই ভয় করিয়া চলে যে তাহার বিরুদ্ধে একটি কথাও বলিতে পারিবে না। যদি তাহারা তাহাকে বিশ্বাস না করে এবং সে যাহা বলিয়াছে তাহা রাজ—