প্রবেশ করিল। সুসজ্জিত কক্ষে একটিমাত্র দীপ জ্বলিতেছিল এবং মূল্যবান সোফার উপর হেলান দিয়া যুবক মাধব উপবিষ্ট ছিল। মাতঙ্গিনী দেয়াল ঘেষিয়া যুবতীসুলভ লজ্জায় নতশির হইয়া দাঁড়াইল, ভগিনীপতির দিকে সে কচিৎ নেত্রপাত করিতেছিল। মাধব চমকিয়া উঠিল এবং অর্দ্ধশায়িত অবস্থা হইতে আপনাকে কিঞ্চিৎ উত্থিত করিল।
কিন্তু উভয়ের কাহারও বাক্যস্ফুর্ত্তি হইল না; একজন যে ভয়াবহ সংবাদ বহন করিয়া আনিয়াছিল তাহা জ্ঞাপন করিতে উৎসুক, অপরে সে সংবাদ শ্রবণ করিবার জন্যও আগ্রহাম্বিত। এই নীরবতায় উভয়েই অস্বস্তি বোধ করিতেছিল। পরিশেষে মাধব পরস্পরের সম্পর্কজনিত পরিহাসের সুবিধা লইয়া কহিল, তুমি ইংরেজ মেমসাহেব হ’লে ভাল হ’ত দিদি, তা হ’লে তোমাকে আসন এগিয়ে দিয়ে বসতে অনুরোধ করতাম। —মাধবের মুখে মৃদু হাসি দেখা দিল।
—তা, দিদি, তুমি বস্ছ না কেন? এই—এখানে—
মাতঙ্গিনী মাধবকে বিপদ হইতে উদ্ধার করিয়া অত্যন্ত চাপা গলায় কহিল, আমি যা বলেছি শুনেছ?
মাধব গম্ভীর হইয়া বলিল, শুনেছি। সত্যি?
সেইরূপ অর্দ্ধস্ফুট কণ্ঠেই মাতঙ্গিনী জবাব দিল, সত্যি।
—আজ রাত্রেই?
—হ্যাঁ, আজ রাত্রেই, চাঁদ ডুবলেই তারা আক্রমণ করবে, চাঁদ ডুবতেও আর আধ দণ্ডের বেশি দেরি নেই।
—তাই নাকি? তা হ’লেই তে সর্ব্বনাশ! কিন্তু দিদি, তুমি এসব খবর পেলে কি ক’রে?
মাতঙ্গিনী এবার অবগুণ্ঠন ঈষৎ উন্মোচিত করিয়া পরিষ্কার কণ্ঠে কহিল, ও কথা জিজ্ঞেস ক’রো না।