পাতা:রাজা প্রজা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পথ ও পাথেয় । ১২৭ নাই এমন কথা আমি কখনই মনে কল্পিনা । অসাড় শক্তিকে সচেষ্ট্র সচেতন করিয়া তুলিবার জন্য এই উত্তেজনার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সচেতন করিয়া তুলিয় তাহার পরে কি করিতে হইবে ? কাজ করাইতে হইবে, না মাতাল করিতেই হইবে ? যে পরিমাণ মদে ক্ষীণপ্রাণকে কাজের উপযোগী করিয়া তোলে তাহার চেয়ে বেশি মদে পুনশ্চ তাহার কাজের উপযোগিতা নষ্ট করিয়াই দেয় ; যে সকল সত্যকৰ্ম্মে ধৈর্য্য এবং অধ্যবসায়ের প্রয়োজন সে কাজে মাতালের শক্তি এবং অভিরুচি বিমুখ হইয়া উঠে। ক্রমে উত্তেজনাই তাহার লক্ষ্য হয় এবং সে দায়ে পড়িয়া কাজের নামে এমন সকল অকাজের স্বষ্টি করিতে থাকে যাহা তাহার মত্ততারই মামুকুল্য করিতে পারে। এই সকল উৎপাত-ব্যাপারকে বস্তুত তাহারা মাদকস্বরূপেই ব্যবহার করে অথচ তাহাকে স্বদেশহিত নাম দিয়া উত্তেজনাকে উচ্চমুরেই বাধিয়া রাখে । হৃদয়াবেগ জিনিষটা উপযুক্ত কাজের দ্বারা বহিমুখ না হইয়া যখন কেবলি অস্তরে সঞ্চিত ও বদ্ধিত হইতে থাকে তখন তাহা বিষের মত কাজ করে—তাহার অপ্রয়োজনীয় উদ্যম আমাদের স্নায়ুমণ্ডলকে বিকৃত করিয়া কৰ্ম্মসভাকে নৃত্যসভা করিয়া তোলে । ঘুম হইতে জাগিয়া নিজের সচল শক্তিকে সত্য বলিয়া জানিবার জন্য প্রথম যে একটা উত্তেজনার আঘাত আবস্তক তাহাতে আমাদের প্রয়োজন ছিল। মনে নিশ্চয় স্থির করিয়াছিলাম ইংরেজ জন্মান্তরের স্বকৃতি এবং জন্মকালের শুভগ্ৰহম্বরূপ আমাদের কৰ্ম্মহীন জোড়করপুটে আমাদের সমস্ত মঙ্গল আপনি তুলিয়া দিবে। বিধাতানির্দিষ্ট আমাদের সেই বিনাচেষ্টার সৌভাগ্যকে কখনো বা বন্দনা করিতাম কখনো বা তাহার সঙ্গে কলহ করিয়া কাল কাটাইতাম । এই করিতে করিতে মধ্যাহ্বকালে যখন সমস্ত জগৎ আপিস করিতেছে , তখন আমাদের মুখনিদ্রা প্রগাঢ় হইতেছিল।