পাতা:রানী শরৎ সুন্দরীর জীবন-চরিত - গিরীশচন্দ্র লাহিড়ী.pdf/২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মহারাণী শরৎস্বন্দরীর জীবন-চরিত। ২১ চেষ্টা করিলে, দুর্দান্ত প্রকৃতির শিশুকেও শাস্ত ও সচ্চরিত্র করিতে পারেন । . অক্ৰবাণাবস্থাতেই কোনও শিশু বিনীত, কেই বা, দারুণ উদ্ধত স্বভাবের পরিচয় দিয়া থাকে। দুই বৎসর বয়সের বালক বালিকার মধ্যে, কেহ স্বহস্তগত খাদ্য অন্তকে দিতে, কেহবা অপরের মুখের গ্রাস কাড়িয়া লইতেও কুষ্ঠিত হয় না –কেহ দৌড়াদৌড়ি করিতে, অন্তকে আঘাত করিতে মুখবোধ করে ; কেহ বা শান্তভাবে খেলা করিতে, অকুষ্ঠিতচিত্তে অন্তের উৎপীড়ন সহা করিতে ধৈর্য্যশীল। কোনও শিশুর মুখে সৰ্ব্বদাই হাস্ত বিরাজ করে,—নৃশংস কাৰ্য্য দেখিলে সকরুণে রোদন করিয়া আকুল হয় ; আবার কেহ নৃশংস কাৰ্য্য দেখিয়া সুখী হয়, হাসি দুরের কথা, তাহার মুখের সুকুমার ভাবের মধ্যেও,কুটিলতার ছায়া লক্ষিত হয়। কেহ সাধারণ ক্রীড়ার সামগ্রীতেই পরিতুষ্ট; নিতান্ত কষ্ট ন পাইলে প্রায় রোদন করে না । কেহবা উগ্ৰমূৰ্ত্তিতে ক্রীড়ার দ্রব্যগুলি নষ্ট করে, গৃহের সামগ্রী অপচয় করে ; উগ্রভাবের খেলায়,—উচ্চও বাবহারে । সৰ্ব্বদাই সকলকে বিরক্ত করে –কথায় কথায় অভিমান, কথায় কথায় জেদ করিয়া থাকে । অতি সামান্ত কারণে ক্রোধে অধীর হইয়। বিরক্তিকর রোদনে প্রতিবাসীকে পর্য্যন্ত জালাতন করে * । প্রস্তাবিত

  • প্রাচীন সময় হইতে, কোন কোন স্থানে শিশুদিগের মূল প্রকৃতি পরীক্ষার একটি পদ্ধতি, অদাপি প্রচলিত দেখা যায়। শিশুর অন্নপ্রাশনের দিন, তাহার সম্মুখে কলম, কালী, টাকা, ধান, এবং একখান অস্ত্র রাখা হয়। শিশু, প্রথমে তাহার মধ্যে যে দ্রব্যে হস্ত প্রদান করে, অভিভাবকেরা সেই দ্রবাকে, তাহার ভবিষ্য জীবনের অবলম্বন বলিয়া, বিবেচনা করিয়া থাকেন। ইহার মূলে অন্ত কোন গৃঢ় উদেষ্ঠ থাকিলেও থাকিতে পারে ; কিন্তু, সেই সুকুমারমতি বালকের মূলপ্রকৃতির পরীক্ষা করাই ইহার উদ্দেশু বলিয়া অনুমান হয় । যথা—লিখিবার বস্তুস্পর্শে বিদ্যানুরাগ, ধান্তস্পর্শে কৃষিতে জানুরক্তি, অস্ত্রগ্রহণে বীরভাব, আর টাকাম্পর্শে অর্থার্জনশীলতার আস্তাস স্থির হয় । কিন্তু, শিশুর শিক্ষাকালে আর সেই পরীক্ষার ফল স্মরণ করিয়া কেহই কাৰ্য্য করেন না ।

অতএব, এখন এই পদ্ধতি, একট। দেশাচারের অন্ধ বিশ্বাসে পরিণত হইয়াছে।