পাতা:রামচন্দ্রের বক্তৃতাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).pdf/১৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

[ ১৭৩ ] উপনীত হইয়াছি । আমাদের সঙ্কল্পের আর অবধি নাই । সুতরাং আমাদের আর গতি মুক্তি হইবে কিরূপে ? তাই অগতির গতি নারায়ন অবতীর্ণ হইয়া আমাদিগকে ক্রোড়ে লইয়াছেন। আমরা একদিনও ভাবি নাই যে, ভগবান লাভ করিবার জন্য সাধন ভজন করিতে হইবে । সাধন ভজন করিব কেন ? কিসে বড় লোক হইব, কিসে কামিনীকাঞ্চনের বিশেষ সুবিধা হইবে ? কিসে মান সন্ত্রম হইবে ? কিসে পাচজনাকে ঠকাইয়া আপনার অবস্থার উন্নতি করিব, এই সঙ্কল্পেই বাদশাহ হইয়া সংসারের বক্ষে অবস্থিতি করিতেছিলাম । সঙ্কল্পের রাজ্যে যাহার বাস, তাহার ন্যায় অশান্তিগ্রস্থ আর কেহ নাই । একথা আমরা সকলে প্রাণে প্রাণে বিলক্ষণ অনুভব করিতে পারি। যে দিন সঙ্কল্পের চূড়ান্ত হইয়া আসিল, যে দিন চারিদিক অন্ধকার দেখিলাম, যে দিন আপনাদের বল বুদ্ধির পরিচয় পাইলাম, যে দিন সংসার অকূল পাথার বলিয়া জ্ঞান হইল, সেই দিনই রামকৃষ্ণকে লাভ করিয়া কুল পাইলাম, সেই দিন সংসারের রহস্য ভেদ হইল, সেই দিন জীবনরঙ্গভূমির রঙ্গজ্ঞান হইল। আপনার অবস্থা দেখিয়া, আপনার অবস্থার ন্যায় অপরের অবস্থা বুঝিয়াছি যে, রামকৃষ্ণদেবই অকুলের কুল স্বরূপ অনাথার আশ্রয়দাতা, সঙ্কল্পযুক্ত নরনারীর একমাত্র অবলম্বন। সঙ্কল্প ক্ষয় করিতে আমরা অশক্ত, সঙ্কল্প ক্ষয় করিয়া ক্রোড়ে লইতে আর দ্বিতীয় কোন দেবতা নাই। আমরা সঙ্কল্পের দাস হইয়। কেমন করিয়া সঙ্কল্প ক্ষয় করিব ! সঙ্কল্পও থাকিবে, মুক্তও হইবে, একথা রামকৃষ্ণের পূৰ্ব্বে সকলের অজ্ঞাত বিষয় ছিল। এক্ষণে যাহাকে সঙ্কল্প রাখিয়া আত্মতত্ত্ব অবগত হইবার ইচ্ছুক হইতে হইবে, রামকৃষ্ণের আশ্রয় ব্যতীত তাহার দ্বিতীয় পন্থা নাই ।