পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
৪১

পিতা ভ্রাতা প্রভৃতির, সঙ্গে বাস করে, তাহারা ইহাদের উপার্জনের দ্বারা পালিত হয়; ইহাদের গৰ্হিত কাজটাও একটা ব্যবসায়ের মধ্যে দাড়াইয়াছে! বোম্বাই ও মান্দ্রাজ প্রদেশে অনেক দেবমন্দিরে কতকগুলি স্ত্রীলোক থাকে, নামে তাহাদের দেবতাদিগের সহিত বিবাহ হয়, কিন্তু ফলে তাহারা বিগৰ্হিত উপায়ে অর্থোপার্জন করে। ইহাদের সমাজিক অবস্থা প্রকাগু গণিকাদিগের অবস্থা অপেক্ষা একটু উন্নত। ইহার অসংকোচে ভদ্রপরিবারের মধ্যে যাতায়াত করে; যাত্রা মহোৎসবাদিতে নৃত্যগীত করে; এবং অনেক স্থলে ভদ্রকুল-' কামিনীগণের অপেক্ষা অধিক সমাদর পায়। সুতরাং সে সময়কার কৃষ্ণনগরের সামাজিক অবস্থার বিষয়ে শোক করিয়া আর কি করিব।

 এই সকল বিষয় উল্লেখ করিবার প্রয়োজন এই তখন এ সম্বন্ধে দেশের সামাজিক অবস্থা কিরূপ ছিল তাহাই প্রদর্শন করা। তখন অল্পবয়স্ক বালকদিগেরও আচার ব্যবহার আলাপ পরিচয়ে দূষিত নীতি প্রবেশ করিত। তরলমতি বালকেরাও এমন সকল বিষয় জানিত যাহা তাহাদিগের জানা উচিত নয়। সুতরাং লাহিড়ী মহাশয়ের বয়ঃক্রম দ্বাদশ বর্ষ হইতে না হইতে পিতা রামকৃষ্ণ ও মাতা জগদ্ধাত্রী যে তাঁহাকে কৃষ্ণনগরের বালকদিগের সঙ্গ হইতে দূরে রবিবার জন্য বাগ্র হইয়াছিলেন এইরূপ অনুমান অযৌক্তিক নয়। পূৰ্ব্বেই বলিয়াছি সাধু রামকৃষ্ণ সন্তানদিগকে সৰ্ব্বদা চক্ষে চক্ষে রাথিতেন। কিন্তু নিজের বিষয় কৰ্ম্মের মধ্যে সৰ্ব্বদা চক্ষে চক্ষে রাখা ও সম্ভব ছিল না। এরূপ অনুমান হয়, যে পিতা মাতা দেখিতেন যে তাঁহাদের সহস্র সতর্কতা সত্ত্বেও সন্তান পল্লীর বালকদলে মিশিত, এবং এমন অনেক বিষয় শিক্ষা করিত, যায় তাহার জানা উচিত নয়। তখন তাহারা উভয়ে তাঁহাকে স্থানান্তরিত করিবার জন্য বাগ্র হইয়া উঠিলেন। কেশবচন্দ্র তখন আলিপুরে কাজ করিতেন ও কালীঘাটের সন্নিহিত চেতলা নামক স্থানে বাসা করিয়া থাকিতেন। পিতা মাতার উদ্ভেগ দেখিয়াই কেশবচন্দ্র বাগকে কলিকাতায় আনিবার ইচ্ছা করিয়া থাকিবেন। যাহা হউক ১৮২৬ সালে দ্বাদশ বর্য বয়সে.কেশবচন্দ্র তাহাকে কলিকাতাতে আনিলেন।