পাতা:রামমোহন গ্রন্থাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/২৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাণ্ডুক্যোপনিষৎ R((( সর্বপ্রকারে অসৎ হয়। অতএব আসতের সহিত সত্য যে পরমাত্মা তাহার বাস্তবিক সম্বন্ধের সম্ভাবনা নাই এ নিমিত্ত অসৎ যে জগৎ তদঘটিত বিশেষণের দ্বারা বেদে সত্যস্বরূপ পরমাত্মাকে কিরূপে কহিতে পারেন। এ স্থলে পুনরায় যদি বল যে জগৎকে প্ৰত্যক্ষ দেখিতেছি। অতএব কিরূপে তাহাকে সর্বপ্রকারে মিথ্যা কহা যায়। উত্তর। স্বপ্নেতে যে সকল বস্তুকে দেখ এবং তৎকালে তাহাতে যে নিশ্চয় কর আর জাগরণেতে যে সকল বস্তু প্ৰত্যক্ষ দেখা ও তাহাতে যে নিশ্চয় করিতেছ। এ দুই নিশ্চয়ের মধ্যে কিছুমাত্র ভেদ নাই। কিন্তু স্বপ্নের জগৎকে স্বপ্নভঙ্গ হইলে মিথ্যা করিয়া জান এবং বিশ্বাস হয় যে বাস্তবিক মিথ্যা বস্তু কোনো সত্যের আশ্রয়েতে সত্যের ন্যায় দেখা দিয়াছিল সেইরূপ যথার্থ জ্ঞানের উদয় হইলে এই জাগরণের জগৎ যাহাকে এখন সত্য করিয়া জানিতেছ। ইহাকেও মিথ্যা করিয়া জানিবে এবং বিশ্বাস হইবেক যে সেই সত্যস্বরূপ পরমাত্মার আশ্রয়েতে মিথ্যা জগৎ সত্যের ন্যায় প্ৰকাশ পাইতেছিল। পুনরায় যদি কহ যে পরমাত্মা প্ৰপঞ্চমীয় জগতের আশ্রয় হয়েন ইহা স্বীকার করিলাম। কিন্তু তাহার জ্ঞানে কোনো প্ৰয়োজন নাই । উত্তর । আত্মার জ্ঞান যে পৰ্য্যন্ত না হয় তাবৎ প্ৰপঞ্চময় জগতের সত্যজ্ঞান থাকিয়া নানাপ্রকার দুঃখ এবং দুঃখ মিশ্রিত সুখের ভাজন জীব হয়। কিন্তু আত্মজ্ঞান জন্মিলে অন্য বস্তুর আকাজক্ষ আর থাকে না। যেমন রাঙ্গেতে রূপার ভ্রম যাবৎ থাকে সে পৰ্য্যন্ত তাহার প্রাপ্তির প্রয়াসে দুঃখ পায় সেই রূপার ভ্রম দূর হইয়া যথার্থ রাঙ্গের জ্ঞান হইলে তাহার প্রয়াস এবং তজন্য দুঃখ আর থাকে না। যদি বল তিন প্রকার অর্থাৎ জাগরণ স্বপ্ন সুষুপ্তি এই মায়িক বিশেষণের নিষেধ দ্বারা পরমাত্মাকে বেদে প্ৰতিপন্ন করিতেছেন তবে পৃথক করিয়া তুরীয়কে বর্ণনা করিবার কি আবশ্যকতা আছে যেহেতু ঐ তিন প্ৰকার বিশেষণকে কহিলেই ঐ তিন প্ৰকার হইতে যে ভিন্ন তেঁহ তুরীয় হয়েন ইহা বোধগম্য সুতরাং হইতো। উত্তর। যদি তিন প্রকার অধিষ্ঠাতা হইতে বস্তুত তুরীয় ভিন্ন হইতেন তবে ঐ তিন প্রকারকে কহিলেই তাহা হইতে ভিন্ন যে তুরীয় তাহার প্রতীতি হইতে কিন্তু ঐ তিন অবস্থার যে অধিষ্ঠাতা তেহই তুরীয় হয়েন তবে তিন অবস্থা মায়িক এ নিমিত্ত তিন অবস্থার অধিষ্ঠাতাকেই তিন অবস্থা হইতে পৃথক করিয়া তুৱীয় শব্দে কহিয়াছেন যেমন সঁজুকে ভ্ৰম সৰ্পের অধিষ্ঠাতা করিয়া কখন উপলব্ধি করিতেছি কখন বা সৰ্পের নিষেধের দ্বারা কেবল রজ্জ্বকে উপলব্ধি করি। অতএব বাস্তবিক উভয়ের ভেদ নাই এ বুদ্ধিবৃত্তির সাক্ষী নিষ্কল পরমাত্মা তেঁহই উপাস্য হইয়াছেন। ওঁ তৎ সৎ ॥