পাতা:রামমোহন গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sw রামমোহন-গ্ৰন্থাবলী হয় আর দেবতাকে রুধির প্রদানেতেও পুণ্য হয় যেহেতু শাস্ত্ৰে বিধি আছে সেই শাস্ত্ৰে কহিতেছেন। “দেবান পিতৃন সমভ্যৰ্চ্য খাদন মাংসং ন দোষভাক” । মনুঃ “নাত্তা দুষ্যত্যদন্নাদ্যান প্ৰাণিনোহহন্যহন্যপি । ধাত্ৰৈাব সৃষ্টা হাদ্যশ্চ প্ৰাণিনো হত্তার এব চ” । “আনিবেদ্যা ন ভুঞ্জীত মৎস্যমাংসাদিকঞ্চন” । অর্থাৎ দেবতা পিতৃলোককে নিবেদন করিয়া মাংস ভোজন করিলে দোষ ভাগী হয় না । ও ভক্ষ্য প্ৰাণিসকলকে প্ৰতি দিন ভোজন করিয়া তাহার ভোক্তা দোষ প্ৰাপ্ত হয় না যেহেতু বিধাতাই এককে ভক্ষক অপরকে ভক্ষ্য করিয়া সৃষ্টি করিয়াছেন। এবং মৎস্য মাংসাদি কোন দ্রব্য নিবেদন না করিয়া ভোজন করিবেক না । অতএব বিহিত মাংসাদি ভোজনে ছাগলাদির হনন ব্যতিরেকে মাংসের সম্ভাবনা হইতে পারে না যেহেতু অপ্রোক্ষিত মৃত পশু খাদ্য নহে। কিন্তু ধৰ্ম্মসংস্থাপনাকাজক্ষী কিরূপে জানিয়াছেন যে আনিবেদিত ভোজন ও পরম হর্ষে ছেদন কেহ২ করিয়া থাকেন তাহার বিশেষ লিখেন নাই তিনি কি ছাগহননকালে বিদ্যমান [[১৯] থাকিয়া নৃত্য কিম্বা উৎসাহ করিতে দেখিয়াছেন কি ভোজনকালে বসিয়া স্ব স্ব উপাসনার অনুসারে অনিবেদিত ভোজন করিতে দৃষ্টি করিয়াছেন। দোষোল্লেখ করিবার জন্য ধৰ্ম্মসংস্থাপনাকাজক্ষী সত্যকে এককালেই জলাঞ্জলি দিয়াছেন ইহাতে আশ্চৰ্য্য কি যাহারা পরমেশ্বরকে জন্ম মরণ চৌৰ্য্য পরদারাভিমর্ষণ ইত্যাদি দোষকে যথার্থ জানিয়া অপবাদ দিতে পারেন। তঁাহারা যে কেবল আনিবেদিত ভোজনের অপবাদ মনুষ্যকে দিয়া ক্ষান্ত থাকেন ইহাও আহিলাদের বিষয়। মহানির্বাণ “বেদোক্তেন বিধানেন আগমোক্তেন বা কলেী । আত্মতৃপ্তঃ সুরেশানি লোকযাত্ৰাং বিনির্বাহেৎ” ॥ জ্ঞানে যাহার নির্ভর তিনি সৰ্ব্বযুগে বেদোক্ত বিধানে আর কলিযুগে বেদোক্ত কিম্বা আগমোক্ত বিধানে লোকাচার নির্বাহ করিবেন। অতএব আগমবিহিত মাংস ভোজন স্ব স্ব ধৰ্ম্মানুসারে নিবেদনপূর্বক করিলে অধৰ্ম্মের কারণ হয় ও গৌরাঙ্গীয় বৈষ্ণবেরা স্বহস্তে মৎস্য বধ করিয়া বিষ্ণুকে নিবেদন না করিয়া খাইলেও ধৰ্ম্ম হয় ইহা যদি ধৰ্ম্মসংস্থাপনাকাজক্ষীর মত হয় তবে তিনি অপূর্ব ধৰ্ম্মসংস্থাপনাকাজক্ষী হইবেন । মৎসরতা কি দারুণ দুঃখের কারণ হয়। লোকে কেন খায় কেন সুখে কাল যাপন করে ইহাই মৎসরের মনে সর্বদা উদয় হইয়া তাহাকে ক্লেশ দেয়। মাংস ভোজন শাস্ত্ৰে অবিহিত ইহা যদি না কহিতে পারে অন্ততও লোকের নিন্দা করিবার উদেশে কহিবেক যে নিবেদন করিয়া [২০] খায় না কিম্বা আচমনে অধিক জল কি অল্প জল লইয়াছিল। কিন্তু মৎসরের তুষ্টির নিমিত্তে কে আপন শাস্ত্ৰবিহিত আহার ও প্রারব্ধনিৰ্ম্মিত ভোগ পরিত্যাগ করে ইহাতে মৎসরের অদৃষ্ট যে দুঃখ তাহা কে নিবারণ করিতে পরিবেক ইতি ॥৩৷৷