পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নানাকথা ; পরাধীনতা \9\יס\ס পূৰ্ব্বে মুসলমানের কিছু দিন সিন্ধুদেশে রাজত্ব করিয়া গিয়াছিল। হিন্দুদিগের দেবতার উপর ও হিন্দু গৃহস্থের স্ত্রীকন্যার উপর মুসলমান কিরূপ সদয় ব্যবহার করিতেন, তাহা হিন্দুগণ সেই কয় দিনেই জানিতে পারিয়াছিলেন। ঠাণ্ডা রক্ত গরম করিবার জন্য যে সকল ইন্ধন আবগুক, মুসলমানকৃত ব্যবহারে তাহার কিছুরই অভাব ছিল না। অথচ তাহাতেও হিন্দুর রক্ত গরম হয় নাই, একেবারে তুষারের মত জমাট বাধিয়া গিয়াছিল। সিন্ধুদেশ হইতে মুসলমান বিদূরিত হইবার পরও গজনীপতি কয়েক বার ভারতবর্ষে আতিথ্য গ্রহণ করিয়াছিলেন। কিন্তু সেই অভ্যাগত মহোদয়ের এক একবার সৎকার ব্যাপারে যে ব্যয়বিধানের ঘটা ইতিহাসে বণিত দেখা যায়, তাহাতে অদ্যাপি হৃদয় দুরু দুরু কম্পিত হইয়৷ থাকে ; এবং যখন শোনা যায়, এহেন অতিথিকে দলবলে নিমন্ত্ৰণ করিয়া আনিতে একজন হিন্দু রাজা সঙ্কোচ বোধ করেন নাই, এবং আর একজন হিন্দু রাজা আপনার রাজ্যভার ও অধীন প্রজাবর্গের মান সন্ত্রম ও ধন প্রাণ র্তাহাদের হস্তে বিনা বাক্যব্যয়েই সমর্পণ করিয়া আপনার জরাজীর্ণ অস্থি কয়গানির ভুক্তাবশিষ্ট প্রাণটুকুর কল্যাণপ্রার্থী হইয়াছিলেন, তখন জাতীয় অবনতি যে নিম্নতম সোপানে উপস্থিত হইয়াছিল, সে বিষয়ে সন্দেহ করিবার কারণ মাত্র জন্মে না । সুতরাং এই তত্ত্ব নির্ণয়ে প্রবৃত্ত হইতে হইলে জাতীয় দুৰ্গতির কারণ নির্দেশ আবশ্যক হইয় পড়ে, এবং তত্ত্বাম্বেষী ঐতিহাসিক মাত্রেই এই জাতীয় প্রকৃতির অধোগতির একটানা একটা মৌলিক কারণ দেখাইয়াছেন। বলা বাহুল্য, ভিন্ন ভিন্ন পণ্ডিত ভিন্ন ভিন্ন কারণ দেখাইয়া দিলেও সেই সমস্ত একটা খাটি কথাতে শেষ পর্য্যস্ত গিয়া দাড়ায়, এবং আমাদের বৈদেশিক ও স্বদেশীয় সমুদয় ঐতিহাসিকগণ প্রায় এক বাক্যেই সেই কথা সমর্থন করেন। কথাটা পাচ জনে পাচ রকমে সাজাইয়া বলেন, এবং আপন আপন বুদ্ধির হাপরে বিবিধ মৰ্ম্মভেদী যুক্তির হাতিয়ার বানাইয়া লইয়া তৎপ্রয়োগে ইতিহাসের শরীরকে ছিন্ন, ভিন্ন, কুন্তন ও বিশ্লেষণ করিয়া অভ্যন্তর হইতে মূল সত্যকে টানিয়া বাহির করেন। এক কথায় হিন্দুর যত দুৰ্গতির মূল—হি দুয়ানী ও হিঙ্গুয়ানীর প্রতিষ্ঠাতা ও রক্ষাকৰ্ত্তা ব্রাহ্মণঠাকুর । ফলে, ঋগ্বেদের বশিষ্ঠ বিশ্বামিত্রের দ্বন্দ্বের সময় হইতে পুণার রাও সাহেবের হত্যকাণ্ডের দিন পর্য্যন্ত ব্রাহ্মণ যে একটা প্রকাও ও গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হইয়া আছে, আদি অনন্ত মহাকালের আদি ও অন্ত থাকিতে পারে, কিন্তু এই ষড়যন্ত্রের আদি আবিষ্কার করিতে পারা যায় না ও অস্তেরও কোন উপস্থিত সম্ভাবনা নাই, ইহা বৈদেশিকগণের এবং আমাদের স্বদেশীয় শিক্ষিতগণের নিদ্ধারিত অবিসংবাদিত সত্য ; এবং এই যড়যন্ত্র হইতেই ভারতবর্ষে হিন্দু জাতির যত কিছু দুৰ্গতি, দুঃখ ও যন্ত্রণ। এক কালে হিন্দু জাতি অত্যন্ত উন্নতি লাভ করিয়াছিল, এবং সেই উন্নতি আবহমান কাল চলিতে পারিত, কিন্তু দুষ্ট ব্রাহ্মণের কূট চেষ্টা পদে পদে সেই উন্নতির গতিরোধ করিতে চেষ্টা করিয়াছে ও অবশেষে হিন্দু জাতিকে কাঞ্চনজঙ্ঘার শিখর হইতে নেপালের তরাই ভূমিতে নামাইয়া আনিয়া ইপি ছাড়িয়া প্রসাদ লাভ করিয়াছে। ব্রাহ্মণই প্রাচীন ভারতের স্বত দুর্দশার মূল।