পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8> e রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রতিবেশীর প্রতি, জ্ঞাতিবর্গের প্রতি, আত্মীয় বন্ধুর প্রতি, কুটুম্বের প্রতি, অতিথিৱ প্রতি, ময়ূন্যের প্রতি, কৰ্ত্তব্য সাধনে এ দেশের লোক যে অন্য দেশের লোকের তুলনায় হীন, ইহা এখনও আমি স্বীকার করিতে প্রস্তুত নহি । মোটের উপর এ দেশের লোকেরা, ধৰ্ম্মবলে অন্য দেশের লোকের তুলনায় হীন, তাহাও স্বীকার করিতে পারিতেছি না। প্রশ্ন উঠতে পারে, তথাপি আমাদের এই দশা কেন ? ইহার উত্তবে আমি বলিতে চাহি, আমাদের একটা গোডার জিনিসের অভাব আছে | পরিবার, আত্মীয়, বন্ধু, প্রতিবেশী, মন্তৰ্য্যসাধারণ, এ সকলের প্রতিই আমাদের কৰ্ত্তব্যজ্ঞান আছে ও সেই কৰ্ত্তব্যে নিষ্ঠা আছে. ; কিন্তু আমাদের আপন আপন সঙ্কীর্ণ সমাজ অপেক্ষ বৃহত্তর সমাজ, সমস্ত দেশ ব্যাপিয়া যে সমাজ বিস্তৃত, সেই সমাজের প্রতি আমাদের কৰ্ত্তব্যজ্ঞান নাই। হুগলী জেলার লোক দিনাজপুরের লোককে কুটুম্ববোধে বা স্বজাতিবোধে (সবণবোধে) বা স্বধৰ্ম্মীবোধে আদর সম্মান করিতে পারে, তাহার সহিত এরূপ কোন সম্পর্ক বা পবিচয় না থাকিলেও মল্লযুবোধে তাহার সম্মান করিতে পারে , কিন্তু স্বদেশীবোধে যে বিশেষ সম্মান ও বিশেষ সমবেদন আবশ্বক, তাহা দেখাইতে জানে না। আমাদের সমাজের মধ্যে ছোট বড় নানা দল আছে ; প্রত্যেক দল আপন দলের স্বার্থরক্ষার জন্য নিযুক্ত আছে , কিন্তু গোটা দেশব্যাপী জনসঙ্ঘের স্বার্থরক্ষার জন্য গোটা দেশব্যাপী কোন দল নাই । বাঙ্গল দেশ সম্বন্ধেই এই কথা , বৃহত্তর ভারতবর্যকে গ্রহণ করিলে ইহ আরও স্পষ্ট হয়। রাজপুত রাজপুতের, শিখ শিখের, মরাঠা মরাঠীর সহিত দল বাধিতে পাবে ও অনেক সময় বাধিয়ছে। কিন্তু রাজপুত শিখ মরাঠা একীভূত হইয়া সাধারণ স্বার্থ মিলাইয়া ভারতব্যাপী দলের স্বষ্টি করে নাই, ভারতবর্ষের হিন্দুমুসলমান একত্র হইয়া ভারতব্যাপী নেশন’ উৎপন্ন হয় নাই। বাঙ্গালী গৃহস্থ পাঞ্জাবী অতিথিকে সম্মান করিতে পারেন, পাঞ্জাবীর বিপদে সমবেদন দেখাইতে পারেন, কিন্তু পাঞ্জাবীর প্রতি ও যেমন পারেন, জৰ্ম্মান ফরাসী ইংরেজের প্রতিও সেইরূপ পারেন। পাঞ্জাবা মন্ত্ৰা—এমন কি—তিনি হিন্দু—এই বলিয়া বাঙ্গালী মানুষ র্তাহার প্রতি সমবেদন দেখাইতে পারেন, কিন্তু পাঞ্জাবী যে ভারতবাসী, অতএব বাঙ্গালীর নিকট আত্মীয়, এই জ্ঞানটুকু তাহার নাই। এইখানেই আমাদের একট। প্রকাগু অভাব রহিয়| গিয়াছে এবং একটা প্রকাগু ছিদ্র রহিয়াছে ; এবং এই ছিদ্রেক্ট প্রবেশ করিয়া, পরে আমাদের উপর প্রভুত্ব স্থাপন করিয়াছে ও আমাদিগের উপব প্রভুত্ব চালাইতেছে। যে সকল ঐতিহাসিক কারণে আমাদের এই অভাবটুকু রহিয়| গিয়াছে, স্থানান্তরে তাহার আলোচনা করিয়াছিলাম, এখানে তাহার আলোচনার প্রয়োজন নাই ; কিন্তু এই অভাব যে আছে এবং উহাই আমাদের সর্বপ্রধান অভাব, ইহা স্বীকাৰ্য্য ইংরেজ রাজপুরুষও ইহা জানেন ; তাহারাও কথায় কথায় বলেন, ভারতবর্য একটা ভৌগোলিক নামু মাত্র, ভারতবর্যে নেশন নাই। এবং যত দিন ভারতবর্ষে নেশন না জন্মিবে, তত দিন তাহারা অপ্রতিহত প্রভাবে স্বেচ্ছাচার করিবেন ; তাহাতে আমরা বাধা দিতে পারিব না । c আমাদের বালকেরা আজ বলে মাতরম্ গাহিয়া রাজপুরুষের কর্ণজালা উৎপাদন