পাতা:রিক্তের বেদন - কাজী নজরুল ইসলাম.pdf/১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রিক্তের বেদন্

অশ্রু ঝরেছে আমাদের নয়ন গলে, এর মত শ্রেষ্ঠ অশ্রু আর ঝরেনি,—ওঃ সে কত যুগ হ'তে!

 আজ ক্ষান্ত-বর্ষণ প্রভাতের অরুণ কিরণ চিরে নিমেষের জন্য বৃষ্টি নেমে তাদের খাকি বসনগুলোকে আরো গাঢ় স্নান করে দিয়েছিল! বৃষ্টির ঐ খুব মোটা মোটা ফোঁটাগুলো বোধ হয় আর কারুর ঝরা অশ্রু! সে গুলো মায়ের অশ্রু ভরা-শান্ত আশীর্ব্বাদের মত তাদিগে কেমন অভিষিক্ত করে’ দিলে!

 তারা চলে গেল। একটা যুগবাঞ্ছিত গৌরবের সার্থকতায় রুদ্ধবক্ষঃ বাষ্পরণের বাষ্পরুদ্ধ ফোঁস্ ফোঁস্ শব্দ ছাপিয়ে আশার সে কি করুণ গান দুলে’ দুলে’ ভেসে আস্‌ছিল,

“বহুদিন পরে হইব আবার আপন কুটীরবাসী,
হেরিব বিরহ-বিধুর-অধরে মিলন-মধুর হাসি,
শুনিব বিরহ-নীরব কণ্ঠে মিলন-মুখর বাণী,—
আমার কুটীর-রাণী সে যে গো আমার হৃদয়-রাণী।”

সমস্ত প্রকৃতি তখন একটা বুকভরা স্নিগ্ধতায় ভরে উঠেছিল। বাঙ্‌লার আকাশে, বাঙ্‌লার বাতাসে সে বিদায়-ক্ষণে ত্যাগের ভাস্বর অরুণিমা মূর্ত হয়ে ফুটে’ উঠেছিল! কে বলে মাটির মায়ের প্রাণ নেই?

 এই যে জল-ছলছল শ্যামোজ্জল বিদায় ক্ষণটুকু অতীত হ’য়ে গেল, কে জানে সে আবার কত যুগ বাদে এম্‌নি একটা সত্যিকার বিদায় মুহূর্ত্ত আস্‌বে?